স্বাধীনতা উত্তরকালে সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও স্বাধীনতার ৪৯বছর পরও শিবগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদসহ খ্যাতিমানদের নামে কোন স্থাপনার নাম করণ, স্মৃতিফলন নির্মান, গণকবর সংরক্ষণ,রাজাকারদের নামের, পর্যপ্ত শহীদ মিনার নির্মান না হওয়ায় শিবগঞ্জের শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সমস্যগুলি সমাধানের জন্য প্রায় দুই বছর আগে কলেজ শিক্ষক সফিকুল ইসলাম স্থানীয় সংসদ বরাবর আবেদনও করেছেন। সরজমিনে মুক্তিযোদ্ধাসহবিভিন্ শ্রেণীর মানুষের সাথেকথাবলেওআবেদন সূত্রে জানা গেছে,শিবগঞ্জেমাত্র ১২/১৩টি শহীদ মিনার রয়েছে।শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে র্দীঘদিন যাবত অস্থায়ী শহীদ মিনারে চলছে জাতীয় দিবস পালনের কাজ। নদী ভাংগন এলাকায় জাতীয় দিবসের সচেতনতা প্রায় শুন্যের কোঠায়।
১৯৭১সালে মুুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন পাকবাহিনীর হাতে শিবগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাধারণ শহীদ ও গণকবরের সঠিক কোন তালিকা হয়নি।তাদের ও খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কবি,সাহিত্যিকদের স্মরনে কোন স্মৃতিফলক,কোন স্থাপনার নামকরণ, কোন রাস্তা বা ব্রীজের নামকরণ এখনো হয়নি।
যদিও শিবগঞ্জে প্রায় ১৩শ কিলোমিটা রাস্তা,,৪শটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সহ¯্রাধীক বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা রয়েছে।তৈরী হয়নি রাজাকারদের তালিকা।নির্মিত হয়নি কোন গ্রন্থগার। পাকবাহিনীর হাতে শহীদের তালিকা এখনো নেই বা তাদের নামে স্মৃতিফলকও নেই।যুদ্ধাপরাধী মামলার বাদী পারচৌকা গ্রামের শহীদ মুসলিম উদ্দিনের ছেলে বদিউর রহমান বুদ্ধু বলেন হুমায়ূর রেজা উচ্চবিদ্যালয়ের পিছনে আমার পিতা ও আপন ৫জন চাচা সহ ১৩জনকে পাকবাহিনাীরা গুলি করে হত্যা সামান্য গর্ত করে রাজাকারের জমিতে পুঁতে রাখে। যা আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত হয়নি। আমার চাওয়া পাওয়া মৃত্যুর আগে যেন গণবকরটি সংরক্ষন দেখতে পাই। অন্যদিকে মোবারকপুর কলাবাড়িতে প্রায় ১শ শহীদের গণকবরটি আজও অরক্ষিত বলে জানান গণকবরের জমি দাতার ছেলে আহসান হাবিব।
শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বজলার রহমান সনু বলেন দু:খজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার ৪৯বছর পরও শিবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়নি। যদিও স্বাধীনতা উত্তরকারে বার বার বিভিন্ন পদে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধেও স্বপক্ষেরই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন।তিনি আরো বলেন শিবগঞ্জে শহীদ মিনার না থাকা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না থাকা, স্মৃতিফলক না থাকা, তাদের স্মরনে কোন রাস্তা,কালভার্র্ট ব্রীজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম করণ না থাকা,রাজাকারদের তালিকা না থাকা কোন সরকারী গণগ্রন্থগার না থাকা আমাদের জন্য দু:খজনক।
শুধু তিনি নন, শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫টিইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারগন,সহ শিবগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা যোবদুল হক, প্রভাতসিংহ, মোয়াজ্জেম হোসেন মুন্টু, আব্দুল মান্নান, আশরাফুল মাস্টার, তরিকুল ইসলাম মাস্টার, ইসহাক আলি, আবুল হোসেন, মোহবুল হক, আব্দুল লতিফ, আহসান আলি মাস্টার,সহশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং উপরোক্ত সমস্যগুলি সমাধানে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতনকর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বী বলেন, শহীদ মিনার নির্মান, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা ও স্মৃতিফলক তৈরী ও গণকবরের তালিকা তৈরী চলছে।অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। তবে রাস্তা, ঘাট, ব্রীজ ও অন্যান্য স্থাপনের ক্ষেত্রে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেও, শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত রাজনীতিবিদের নাম নামকরনের ব্যাপারে এপর্যন্ত কোন আলোচনা হয়নি।
সুযোগমত আমরা উপজেলা পরিষদের সভায় আলোচনা করবো। রাজাকারের তালিকা ও গণগ্রন্থগারের ব্যাপারে সঠিকভাবে আমার কিছু জানা নেই। এব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি আমাদের জন্য দু:খজনক । তিনি আরো বলেন, আমি ইতিমধ্যে আমাদের সংসদ সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহমেদের সাথে আলোচনা করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সকলেই সম্মিলিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত করতে উপরোক্ত কাজগুলি বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মানের কাজ শুরু হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে শহীদ মিনার নির্মানের ব্যাপারে প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট জায়গা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।মনাকষা ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম মনাকষা বাজারে শহীদ মিনার নির্মানের মত স্থান নেই জানিয়েছেন। অন্যান্য ইউপি চেয়ারম্যনগণ এখনো জানাননি।
তারা স্থান বরাদ্দ দিলেই শহীদ মিনার নির্মানের কাজ শুরু হবে।শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ফলক,গণকবর বাঁধাইও স্মৃতিফলক নির্মান, রাজাকারের তালিকা তৈরীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারী নির্দেশনা এসেছে, কাজ চলছে। তবে গণকবরের ক্ষেত্রে কিছু কিছু গণকবর রাজাকারের জমিতে থাকায় কিছুটা বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে।গণগ্রন্থগার তৈরীর কথা আমাদের চিন্তাভাবনায় আছে। পদক্ষেপ গ্রহন করবো ইনশাল্লাহ। বাকী সমস্যগুলো আমরা পর্যায় ক্রমে করবো ইনশাল্লাহ।