উপসর্গযুক্ত কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকর। করোনার উপসর্গ থাকা ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই কার্যকারিতা ৯১ দশমিক ৮ শতাংশ। এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এমন দাবি করা হয়।
মঙ্গলবার চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে এই টিকার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগের সমাধান হয়েছে। মস্কো ইতিমধ্যে মানুষের শরীরে এই টিকার প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে।
চূড়ান্ত ট্রায়ালের আগেই ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেয়ায় এটি বেশ বিতর্ক তৈরি করেছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটির উপকারিতা এখন প্রমাণিত। এর ফলে প্রমাণিত ভ্যাকসিনের তালিকায় ফাইজার-বায়োএনটেক, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না ও জ্যানসেনের সঙ্গে স্পুটনিক ভিও যুক্ত হল।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও বেলজিয়ামে তৈরি জ্যানসেন ভ্যাকসিন যেভাবে কাজ করে, স্পুটনিক ভি সেভাবেই কাজ করে। শরীরে কিঞ্চিৎ মাত্রায় করোনাভাইরাস প্রবেশ করাতে এই ভ্যাকসিনটি প্রকৌশলের মাধ্যমে একটি অক্ষতিকর ও ঠাণ্ডা ধরনের ভাইরাস ব্যবহার করে থাকে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, স্পুতনিক-ভি টিকার অন্তর্বর্তী পরীক্ষায় অংশ নেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের এক-তৃতীয়াংশকে এই টিকা দেওয়া হয়। বাকিদের দেওয়া হয় প্লাসেবো (প্রতিক্রিয়াহীন তরল পদার্থ)। আসল টিকা গ্রহণকারীদের কারো বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যদিও টিকা নেওয়ার পর কেউ কেউ হালকা জ্বরের মতো উপসর্গ, ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা বা দুর্বলতা বোধ করেছিলেন।
চিকিৎসাবিষয়ক ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে গবেষকেরা লিখেছেন, এই পরীক্ষার মধ্যেই আলাদা করে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ২ হাজার ১৪৪ জনকে আলাদা করে টিকা প্রয়োগ করা হয়। এদের করোনার উপসর্গ ছিল। এ ক্ষেত্রে স্পুতনিক-ভি টিকার কার্যকারিতা ৯১ দশমিক ৮ শতাংশ পাওয়া যায়।
স্পুতনিক-ভি টিকাটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গামালেয়া রিসার্চ সেন্টার, রাশিয়া ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) ও রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই টিকা ২১ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ নিতে হয়।
যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক স্টিফেন গ্রিফিন বলেন, তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণের ফল কার্যকারিতার বিবেচনায় বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক। বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ও প্রবীণ রোগীদের ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর।
এখন এই টিকার শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হবে। এ পর্যায়ের পরীক্ষা ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণ থাকবে। যদিও এর আগেই রুশ কর্তৃপক্ষ এই টিকার গণপ্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে।