সেনা অভ্যুত্থানের ২১ দিন পর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হলো মিয়ানমারে। মিয়ানমারজুড়েই ধর্মঘট। ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক-নার্স,
সন্ন্যাসি-পেশাজীবীদের বিক্ষুব্ধ অংশগ্রহণে উত্তাল হয়ে ওঠে মিয়ানমারের রাজপথ। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, মুখে স্লোগান আর চোখে সেনাবিদ্বেষী আগুন! ৩৩ বছর আগেও একবার এমন রণ হুঙ্কারেই গর্জে উঠেছিল মিয়ানমার। ৮ আগস্ট, ১৯৮৮ সাল। সেদিন ছাত্রনেতাদের ডাকে ফুঁসে উঠেছিল বার্মা।
‘রেঙ্গুনের কসাই’ খ্যাত জেনারেল সেইন লুইন সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল জনগণ।
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ, ধনী-গরিব, বেকার-শ্রমিক-সবাই এক হয়ে গিয়েছিল সেনা শাসনবিরোধী আন্দোলনে। ফলও পেয়েছিল প্রায় হাতেহাতেই। এর মাত্র চারদিন পরেই পদত্যাগ করেন জেনারেল সেইন লুইন। সব মিলিয়ে মাত্র ১৭ দিন ক্ষমতায় টিকতে পেরেছিলেন লুইন।
বুট-বুলেটে পিষ্ট বার্মার পরবর্তী ইতিহাস আরও নৃশংস।
সেইন লুইনের পর প্রেসিডেন্ট হন ড. মং মং। সেনা নিয়ন্ত্রিত বার্মা স্যোশালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টির-ই বেসামরিক কর্ণধার। সেনা ছত্রছায়ায় থেকেও এক মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি ‘রেঙ্গুন পন্ডিত’ ড. মং মংও। ১৮ সেপ্টেম্বর আবার অভ্যুত্থান। ক্ষমতায় আসেন জেনারেল স মং। প্রথম দিন থেকেই বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়ে ওঠেন স মং।
এক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ১৫০০ জনকে হত্যা করেন স মং। সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞে দ্বিতীয় সপ্তাহেই ভেঙে পড়ে মিয়ানমারের ঐতিহাসিক ‘৮৮৮৮’ আন্দোলন। তবে থেমে থাকেনি মিয়ানমার। বছরের শেষ দিকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে জনগণ। পালটা চাল শুরু করে সেনারা। গুম-গ্রেফতার-অপহরণ করে টুঁটি চেপে ধরে ৮৮৮৮ আন্দোলনের।
এই ‘৮৮৮৮’-র আন্দোলন থেকেই উঠে আসেন অং সান সু চি। মাসের পর মাস দুঃসাহসী আর জ্বালাময়ী বক্তব্যে চাঙা রাখেন সেনাবিরোধী বিক্ষোভ। ৩৩ বছর পর আবারও সেনাবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন সু চি। ২২ ফেব্রয়ারি, ২০২১- তাকে কেন্দ্র করেই আরেকবার ফুঁসে উঠেছে মিয়ানমার।
‘৮৮৮৮’-র সঙ্গে মিল রেখে বিক্ষোভকারীরা এর নাম দিয়েছে ‘২২২২২’। সুতরাং তাদের হিসাব ধরেই বলা যায়, সু চিকে না ছাড়লে আগামী বছর পর্যন্তও অব্যাহত থাকবে এ বিক্ষোভ। অন্য পরিসংখ্যান দেখলে, সেনাবাহিনীর এক বছরের জরুরি অবস্থার সামনে এক বছরের বিক্ষোভ-চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল জনগণ।
এটা যে শুধু কথার কথা নয়, সোমবারের ধর্মঘটেই সে অঙ্ক মিলিয়ে নিয়েছে সেনার। গত ৩৩ বছরে এমন বিক্ষোভ দেখেনে সেনারা। মিয়ানমারের প্রত্যেকটা রাস্তা এদিন জনারণ্য হয়ে উঠেছিল বিক্ষোভে। অকল্পনীয় কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে ভেবে বিক্ষোভকারীদের ইয়াঙ্গু-নেপিদোর মূল শহরে ঢুকতে দেয়নি সেনা-পুলিশ।
শহর দুটির প্রবেশমুখে কড়া নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরি করে জান্তা সরকার। এমনকি বিক্ষোভ দমনে গুলি করতেও সাহস পায়নি জান্তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হবে? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই আন্দোলন? এমন ধীরে চল নীতিই কি থাকবে তাতমাদু? নাকি মারমুখী আক্রমণে ধুলোয় উড়িয়ে দেবে জনগণের ‘২২২২২’ বিক্ষোভ? দ্য ইরাবতী।