রাজশাহীর বাঘায় পূর্বের ঘটনার জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশসহ ৭ জন আহত হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশসহ বাদি হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার চন্ডিপুর সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃতদের মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার (২৯ মার্চ) দুপুরে আবদুল গনি কলেজের পরিদর্শক ও চন্ডিপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আরিফুল ইসলাম কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি জোতরাঘব কমিউনিটি ক্লিনিকের কাছে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাব্বি, আসিক, নয়নসহ ৬-৭ জনের একটি দল আতর্কিতভাবে লোহার রড, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। এই ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় ঢাকাগামী সুপার সনি (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৫২৫১)নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি সিএনজি ভাংচুর করা হয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে কনেন্সটেবল সাগর, বিদ্যুৎ, রিপা, ডিএসবি’র এসআই নুরুজ্জামান, স্থানীয় মোশারফ হোসেন, আরিফুল ইসরাম, সুপার সনি বাসের ড্রাইভার সাইফুল ইসলাম আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তবে এই ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন-উপজেলার বড় ছয়ঘটি গ্রামের মিলন হোসেন, শরিফুল ইসরাম, বাবুল হোসেন, সাব্বির হোসেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঘা থানার এসআই তৈবুর রহমান বাদি হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপর দিকে আরিফুল ইসলাম বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত করে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া বুলবুলি বেগম বাদি হয়ে তিনজনের নাম উল্লে করে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে উপজেলার চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ডিজিটাল কনসার্ট অনুষ্ঠানে মেয়েদের সংরক্ষিত গ্যালারিতে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করে স্থানীয় রাব্বি হোসেন, নয়ন আলী, সোহেল রানা। এ সময় অন্তর আলী নামের এক যুবক তাদের বাধা দেয়ায় বাকবিতন্ডা হয়। এই ঘটনার জের ধরে পরের দিন রোববার বাড়ির গরু বিক্রি টাকা নিয়ে অন্তর আলী মোটরসাইকেলে ব্যাংককে যাচ্ছিল। অন্তর আলী বাঘা মাজার গেইটের সামনে পৌছলে তারা পথরোধ করে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারপিট করে ৯৫ হাজার টাকা ও ২২ হাজার টাকা মূল্যের দু’টি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার অভিযোগে তার মা বুলবুলি বেগম বাদি হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে বাজুবাঘা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, কিছু ছেলেরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় এক অনুষ্ঠানে মেয়েদের সংরক্ষিত গ্যালারিতে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্তর আলী তাদের বাঁধা দেয়। তারপরও জোর করে যেতে চায়। এ নিয়ে অন্তর আলী ও তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এই ঘটনার জের ধরে তারা অন্তর আলীকে মারপিট করে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এই ঘটনার জের ধরে আবারও তারা সোমবার দুপুরে এক কলেজ পদর্শককে মারপিট করে। এর জের ধরে এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে বাস ও সিএনজি ভাংচুর করে।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আব্দুল বারী জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের কিছুটা চোট লেগে আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনায় পৃথকভাবে পুলিশ ও স্থানীয় দুই ব্যক্তি বাদি হয়ে মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।