মো: আব্দুল আজিজ: রাজনৈতিকভাবে জাতীয় সংসদের নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসন টি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ সংসদীয় এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময় থেকে এই আসনটি এক সময়ে পরিচিত ছিলো চীনপন্থী বাম রাজনীতির ঘাটি হিসাবে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর রক্ষী বাহিনী ও মুজিব বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশের যে কয়টি এলাকায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে ছিলো তার অন্যতম ছিল এই আত্রাই-রানীনগর অঞ্চল। ওই প্রতিরোধে অংশ নিতে গিয়ে এই অঞ্চলের অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে জেল জুলুম থেকে শুরু করে নানা অত্যাচার ও নিপীড়ন।
যে কারনে শহীদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের ১৯৭৬ সালের সাধারন ক্ষমা ঘোষনার আওতায় এই এলাকার অনেক রাজনৈতিক বন্দী কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। মূলত: এদের মাধ্যমেই আত্রাই-রানীনগর তথা নওগাঁ জেলায় গড়ে ওঠে বিএপির শক্ত সাংগঠনিক ভিত। যা জাতীয় সংসদ এই আসনটিকে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের রাজনৈতিক ঘাটি হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়। আর এই রাজনৈতিক ঘাটি গড়ার নেপথ্যের মূল সংগঠক ছিলেন বিএনপির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জনাব আনোয়ার হোসেন (বুলু)।
তবে বাম রাজনীতির সময়কাল থেকে তিনি এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতির প্রধান সংগঠক হিসেবে জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করলেও আপন বড় ভাই হওয়ার সুবাদে নেতৃত্বের আসনে বসান জনাব আলমগীর কবীরকে। ফলে ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন (বুলু)-এর উপর ভর করে সহজেই ৩ বার আত্রাই-রানীনগর আসনের সংসদীয় নির্বাচনের বৈতরনী পার হয়ে যান আলমগীর কবীর।
কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়ে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তার আচার- আচরন সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে থাকে। তার মধ্যে দেখা দেয় চরম অহমিকা বোধ। তিনি দলের পরিবর্তে নিজের ইচ্ছে ও খামখেয়ালীপনাকে প্রধান্য দিতে থাকেন। তার এসব সেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী তার রোষানলে পরে চরম দূব্যবহারের শিকার হয়ে রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ফলে দলের নেতা-কর্মী ও তৃনমূলের সাথে তার ব্যাপক দূরুত্ব তৈরি হয়। তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন বিএনপি এবং এর সকল অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের থেকে। যা দলের জন্য এক ধরনের বিপর্যয় বয়ে আনে।
অপর দিকে সর্বহারা দমনের নামে জিএমবি ও বাংলা ভায়ের উত্থানে সহায়তার কারনে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন আলমগীর কবীর। যা বিএনপির জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাাতিক পরিষরে এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
সরকারের শেষ মহূর্তে বিএনপিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে ১/১১ এর কুশীলবদের সঙ্গে আঁতাত করে এই অবস্থায় আলমগীর কবীর বিএনপিকে চাকর-বাকর এবং নফরদের সংগঠন হিসেবে অবহিত করে দল ত্যাগ করে এল ডি পি-তে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে এল ডি পির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের উন্নয়ন হলে তিনি এল ডি পিও ত্যাগ করেন। দল ত্যাগের পর থেকে আলমগীর কবীর প্রকাশ্যে বিভিন্ন মিডিয়া এবং লেখালেখির মাধ্যমে বিএনপি বিরোধী অপপ্রচারে সামিল হন। তার এসব অপপ্রচারের মূল টার্গেট ছিলো বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান।
আলমগীর কবীরের এই বিশ্বাস ঘাতকতায় যখন আত্রাই-রানীনগরের বিএপির নেতা-কর্মী ও শুভানুধায়ীরা চরম হতাশ এবং হতবিহব্বল ঠিক সেই মর্হূতে জনাব তারেক রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে দলের হাল ধরেন জনাব আনোয়ার হোসেন (বুলু)। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং সাংগঠনিক দক্ষতায় ঘুরে দাড়ায় আত্রাই-রানীনগর অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী শক্তি। তিনি স্থানীয় বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন সমূহের সাংগঠনিক কাঠামোকে। উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের গন্ডি পেরিয়ে প্রতিটি গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। যা এখন নির্বচন ও আন্দোলনের যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সদা প্র¯তুত।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট কারচুপির কারনে পরাজিত হন জনাব আনোয়ার হোসেন (বুলু)। ওই নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ১০৩% ভোট কাস্ট হওয়ার রেকর্ড সাড়া দেশে প্রচন্ড চাঞ্চল্য সৃষ্টিকরে। গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে যা প্রমানসহ তুলে ধরায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাধ্য হন সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে।
অপর দিকে আলমগীর কবীর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ব্যার্থ হন। তবে তিনি ২০১৮ সাল পর্যšত এই সময়কালে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে বিএনপি, বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বিরোধী অপপ্রচার অব্যহত রাখেন।
বিএনপি ত্যাগের পর থেকে আলমগীর কবীর মূলত: ঢাকা ও যুক্তরাষ্ট্রে তার পদচারনা সীমিত রাখেন। শাষক দল আওয়ামী লীগের সহায়তায় তিনি অপচেষ্টা চালান আত্রাই-রানীনগরের বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন সমূহে ভাঙন ধরাতে। তাতেও ব্যর্থ হওয়ায় তিনি সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন স্থানীয় রাজনীতি ও সংগঠন থেকে।
এক দিকে সংগঠন এবং রাজনীতি থেকে গত ১২ বছরের অনুপস্থিতি তাকে নতুন ভোটার ও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে তাকে একজন অপরিচিত ব্যক্তিতে পরিনত করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাথে তার গোপন আঁতাতের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় স্থানীয় জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে তিনি পরিনত হয়েছেন বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীকে। যা প্রবল ভাবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভাবমুর্তিকে সংকটে ফেলেছে।
ফলে তার এইসব ভূমিকার কারনে তিনি একজন জনপ্রিয় নেতার পরিবর্তে পরিনত হয়েছেন এক চরম অজনপ্রিয় ব্যক্তিতে। রাজনৈতিক মাঠের এই বাস্থবতায় আলমগীর কবীরের দলে ফেরা এবং সংসদ নির্বাচন মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে আশার বিপরীতে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে।
যা প্রশমিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে তাকে দূরে রাখা। অন্যথায় নিশ্চিত বিজয়ী হওয়ার মতো এই আসনে চরম পরাজয়ের গ্লানি বহন করতে হতে পারে।