রাজশাহীতে আশঙ্কাজনকভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে তাদের সেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে যাবে। এ কথা জানিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন- রাজশাহী মেডিকেল (রামেক) কলেজ হাসপাতালের পরিচালক। এরই মধ্যে রাজশাহীতেও মিলেছে ভয়ংকর এডিস মশার লার্ভা। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক জরুরি বার্তা দিয়ে এ চিঠি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছে।
হাসপাতাল পরিচালকের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে-‘উপযুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১৫ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগীই ঢাকা ভ্রমণকারী। অবশিষ্ট ৪ জন ঢাকা ভ্রমণ করেননি। ওই হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড প্রস্তুত করে ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জটিল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আইসিইউসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবাও প্রস্তুত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগ শুরু হয়েছে যা পরবর্তীতে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জানি ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত রোগ যা নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়লে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। বিষয়টি বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিয়ন্ত্রণ জন সচেতনতা সৃষ্টিসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার ডেঙ্গু রিপোর্টে বলা হয়েছে-এ হাসপাতালে নতুন করে আরও সাতজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে চারজন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তাই নতুন ও পুরোনো রোগী মিলিয়ে রামেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ( ৩০ নং ওয়ার্ড) এখন মোট ১৭ জন রোগী ভর্তি আছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, এতদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই ঢাকার ছিলেন। তাদের কেউ ঢাকায় থাকতেন আবার কারও কারও ঢাকা ভ্রমণের হিস্ট্রি ছিল৷ কিন্তু হালে রাজশাহীতে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীও ভর্তি হচ্ছেন। তাই বিষয়টি উদ্বেগজনকই বটে। এ হারে ডেঙ্গু রোগী বাড়লে তা সামাল দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্যই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, রামেক হাসপাতাল পরিচালক সাহবের চিঠি আমি এখনও হাতে পাইনি। তবে রাজশাহীতে ডেঙ্গু নেই। যে কয়েকজন রোগী ভর্তি আছেন তারা সবাই ঢাকার বা ঢাকা ফেরত। রাজশাহীর ৩-৪ জন রোগীর কথা বলা হচ্ছে। তবে দুইজন ছাড়া অন্যরা বাইরের বলেই জানি। আর ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাসিক শুরু থেকে সতর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে ৩০টি ওয়ার্ডের সচিব, মশক পরিদর্শক ও সুপারভাইজারদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর ব্যাপারে মহানগরবাসীকে সতর্ক করতে অ্যাডভোকেসি সভা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. আনজুম আরা বেগম বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসচেতনতা এবং মশার বংশবিস্তার রোধের বিকল্প নেই। আগামী সপ্তাহে এসব কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো বাড়ি, ভবন ও প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য আগামী শনিবার (১৫ জুলাই) থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এদিকে রাজশাহীতেও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার সন্ধান মিলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের টিম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সম্ভাব্যস্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। ল্যাবে সেগুলোর নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছিল। পাঁচ দিনে মোট ৭৫টি বাড়ি থেকে সংগ্রহকৃত নমুনার মধ্যে ২৮টিতেই প্রাণঘাতী এডিসের লার্ভা মিলেছে। অর্থাৎ রাজশাহীও এখন এডিসের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠেছে! সোমবার (১০ জুলাই) বিকেলে ল্যাব টেস্টের এ ফলাফল পান বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাই রাজশাহীর ডেঙ্গু পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক হিসেবেই দেখছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, এবার বছরের শুরুতেই রাজশাহী বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ে। বর্তমানে বিভাগের আট জেলায় মোট চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৭ জন। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৫ জন। তাই সিটি করপোরেশন র্যানডম সিলেকশনের মাধ্যমে এলাকার ৭৫টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এতে এজিপ্টাই মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। আর এজিপ্টাই এবং এলবোপিক্টাস এ দুই প্রজাতির লার্ভাই মিলেছে। আর এ দুটো মিলে জুলাই-আগস্টে ডেঙ্গু ছড়াতে থাকলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে। তাই এ লার্ভা ধ্বংসের জন স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও সিটি করপোরেশনকে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে।