বগুড়া মেয়রের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ


, আপডেট করা হয়েছে : 22-08-2023

বগুড়া মেয়রের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

বগুড়া পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার বিরুদ্ধে আড়াই বছরে পৌরসভার ৬০ কোটি টাকার তহবিল তছরুপ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (পৌর-১ শাখা) উপসচিব আবদুর রহমানের স্বাক্ষরিত পত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


মেয়র রেজাউল করিম বাদশা তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেন। তিনি বলেন, অভিযোগকারী এমএকে আজাদ একজন দালাল। তিনি সিন্ডিকেট গড়ে পৌরসভায় নানা আত্মসাতে জড়িত। তাই তাকে পৌরসভায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দেওয়া আছে। সিল ও স্বাক্ষর জাল করায় মিডল্যান্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পৌরসভায় এসব অবৈধ কাজ করতে না পেরে তিনি আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। ফোন না ধরায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুম আলী বেগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বগুড়া সদরে কৈগাড়ী এলাকার বাসিন্দা ও পৌরসভার ঠিকাদার এমএকে আজাদ মেয়রের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, দুর্নীতিবাজ মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ৩ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপ-সচিবের ১৭ আগস্ট স্বাক্ষরিত পত্রে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে মেয়র সাজা পাবেন।


মেয়রের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো হলো-স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতি ছাড়া তিনি পৌর ভবনের নকশা পরিবর্তন করে মিডল্যান্ড ব্যাংকের উপশাখা স্থাপন করেন। ওই ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঘুস নিয়ে পৌরসভার গ্যারেজ ও ভবন ভেঙে ব্যাংকের উপশাখা স্থাপন করে পৌর সম্পদ বিনষ্ট করেছেন। জন্ম নিবন্ধন ফি ২৫ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকা। মেয়র রাজস্ব কর্মচারীর পরিবর্তে বিএনপি দলীয় ১০ জন কর্মীকে দিয়ে কাজটি করান। নাগরিকদের কাছে ৫০০ থেকে হাজার টাকা আদায় করা হয়। হয়রানি করা হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন না। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনের প্রায় কোটি টাকা সরকারি খাতে জমা করা হয় না। পৌর তহবিলে জমা দিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে তহবিল থেকে উত্তোলন করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।


মেয়রের পালিত মেয়ের জামাইয়ের আত্মীয় পৌরসভার নিুমান সহকারী আতিকুর রহমান ও তার স্ত্রী উপ-সহকারী প্রকৌশলী রোকসান পারভীন রেখা। তাদের ওপর প্রকৌশল শাখার ঠিকাদারি বিল, যানবাহন মেরামত ও নকশা দেখভালসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বিধিবহির্ভূতভাবে মেয়রের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাজ পাইয়ে দেন। অনেক সময় কাজ না করেই টেন্ডারের বিল দেওয়া হয়। গত দুই বছরে কাজ না করে রাজস্ব উন্নয়ন ও প্রকল্পের তহবিল থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। মাঠপর্যায়ে এসব কাজের কোনো নমুনা নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট, ড্রেনে জলাবদ্ধতার চিত্র দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। বগুড়া পৌরসভার মেয়র বাদশা বিনা টেন্ডারে দুই লাখ টাকার নিচে কাজ দিতে পারেন। কিন্তু তিনি পৌর মসজিদ বিল্ডিংয়ের তৃতীয় ও চতুর্থতলা নির্মাণকাজ প্রায় ৫০ লাখ টাকায় দিন হাজিরার মাধ্যমে করিয়েছেন। এ কাজটি করানো হয়েছে শহর পরিকল্পনাবিদ আল মেহেদী হাসানের মাধ্যমে। মেয়র এখান থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।


গত আড়াই বছরে বগুড়া পৌরসভায় প্রায় তিন হাজার ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। রাস্তার মাপ দ্বিগুণ দেখিয়ে বিল্ডিংয়ের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রতি নকশায় ৫০ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়া হয়। ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে নকশা অনুমোদনের নথি পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা মিলবে। নকশা অনুমোদন দিয়ে মেয়র প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে শহরকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছেন।


মেয়র বাদশা এক লাখ টাকা ঘুস নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোয়ার্টারের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ১৫ ফুট রাস্তা বের করেন। ওই রাস্তা এক ব্যক্তির দেখিয়ে ছয়তলা আবাসিক ভবনের নকশা অনুমোদন করেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ ব্যাপারে মোবাশ্বের নামে এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।


মেয়র স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন না নিয়ে পৌরসভায় বিএনপির ১০ কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব ব্যক্তি পৌরসভায় কাজ করেন না। পৌরসভার বাইরে ২৮ জন কাউন্সিলরের কোনো অফিস থাকার বিধান নেই। অথচ প্রতি বছর কাউন্সিলরদের গুদাম ভাড়ার নামে সাত লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এর অর্ধেক মেয়ে আত্মসাৎ করে থাকেন। দুই বছরে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বগুড়া পৌরসভার মোট রাজস্ব আয় ২৫ কোটি টাকা। রাজস্ব কর্মচারী লেবার, সুইপার ও মাস্টাররোল বেতন ভাতাদি বাবদ ব্যয় হয় বছরে ১০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১৫ কোটি টাকা বিভিন্ন ভুয়া টেন্ডার, ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে পৌর তহবিল থেকে আত্মসাৎ করা হয়।


বগুড়া পৌরসভার বসতবাড়ি, ভবন স্থাপনা অ্যাসেসমেন্ট কর নিরূপণে কমিটি আছে। অথচ তাদের নামমাত্র স্বাক্ষর করার ক্ষমতা দিয়ে মেয়র ইচ্ছামতো ৭৫ শতাংশ হ্রাস করেছেন। আদায়কালে আবার ৩০ শতাংশ রিবেট দিয়ে পৌরসভার আর্থিক ক্ষতি করছেন। বিনিময়ে নাগরিকদের কাছে উপরি হিসাবে ১৫ শতাংশ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মেয়র নিজের ছয়তলা বাড়ির অ্যাসেসমেন্ট কর নামমাত্র করে নিয়েছেন। ভবনকে টিনশেড বাড়ি দেখিয়েছেন।


এসব ছাড়াও গত ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে টিআর’র প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। তিনি টিআর’র টাকার কোনো কাজ না করে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখান ও বিল ভাউচার দাখিল করেন।সূত্র: যুগান্তর



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার