সারাদেশে বাড়ছে রেল নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশ যুক্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিক রেলওয়ে রুটের সঙ্গে। বর্তমানের রেলওয়ের মোট দুই হাজার ৯৫৬ কিলোমিটার রুট রয়েছে। আগামী অক্টোবরে তা বেড়ে তিনহাজার ২১৭ কিলোমিটারে উন্নীত হবে। দেশীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অক্টোবরে চালু হচ্ছে চারটি মেগা প্রকল্প।
এই রেলপথ চালুর মাধ্যমে ২৬২ কিলোমিটার রুট বৃদ্ধি পাবে। চারটি প্রকল্প হলো- পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ও আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।
চারটি রেলপথই ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সম্ভাব্য রুট। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে শুরু হওয়া এই ট্রান্সএশিয়ান রেল রুট বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবে।
চারটি রেলপথ চালুর ফলে রেলওয়ের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। এটি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চারটি প্রকল্পের মধ্যে পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ আগামী ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ, খুলনা থেকে মোংলা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ ও বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্প ছাড়া বাকি তিন প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যেই চারটি প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে প্রকল্পের সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলায় রেললাইন সম্প্রসারণে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্পসহ চারটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে।
একটি ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রেল অত্যন্ত অপরিহার্য। বিদেশে আমরা যেখানেই যাই না কেন, যেই দেশ যত উন্নত সেই দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তত উন্নত। তাই আমরা আমাদের রেলকে প্রত্যেকটি জেলার সঙ্গে সম্প্রসারিত করব। প্রতিটি বন্দরের সঙ্গে রেললাইন যুক্ত করা হবে।
রেললাইন ইলেকট্রনিক ট্রেকে রূপান্তরিত করা হবে। সিঙ্গেল লাইনগুলো ধীরে ধীরে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হবে।’ তাই আগামী অক্টোবরের মধ্যে আখাউড়া থেকে আগরতলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্প, চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে বলে জানান তিনি।
পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্প ॥
বর্তমান সরকারের যোগাযোগ অবকাঠামোর একটি মেগা প্রকল্প পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্প। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। তবে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন বসানোর পুরো কাজ শেষ হয়েছে।
আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মাসেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে নতুন চারটি জেলা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে।
পাশাপাশি বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া রাজবাড়ী রেলপথটি পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণা-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এই রেলপথের সুবিধা পাবে। এ ছাড়া যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ট্রেন এই রুটে চলাচল করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক রেলওয়ে রুট ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হবে এটি। ইউরোপের জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে শুরু হওয়া এই ট্রান্সএশিয়ান রেল রুট বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবে।’ এর ফলে রেলওয়ের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে জানান তিনি।
প্রস্তুত ১০০ রেল কোচ ॥ পদ্মা রেলসেতু দিয়ে চলাচলের জন্য চীন থেকে আনা ১০০ কোচ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমদানি করা এমন ১০০ কোচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে সৈয়দপুরে। ৬৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে চীনের তৈরি মোট ১০০টি ব্রডগেজ কোচ ও বগি নিয়ে আসা হয়েছে। কোচ প্রস্তুত করেছে চীনের সিআরইসি তাংশান কোম্পানি লিমিটেড।
১০০টি কোচের মধ্যে ২৫টি নন-এসি চেয়ার কোচ, ৩৫টি এসি চেয়ার কোচ, ১৫টি স্লিপার কোচ, ১৫টি ডাইনিং ও গার্ড রেক সংযুক্ত কোচ এবং ১০টি পাওয়ার কার রয়েছে। প্রতিটি কোচে আসন ১০০টি। এসব কোচে যাত্রীর সংস্পর্শে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে স্লাইডিং ডোর। বন্ধও হবে একই প্রক্রিয়ায়।
গন্তব্যস্থল জানার জন্য মনিটর রয়েছে প্রতি কোচে। সিসি ক্যামেরা, মাইক্রোওভেন, বায়ো টয়লেটসহ প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০টি কোচ বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। বাকি ৩০টি কোচ পদ্মা রেলসেতুতে চলাচলের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্টরা জানান।
প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত তিনটি অংশে রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন, ঢাকা-গে-ারিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ডাবল লাইন, লুপ, সাইডিং ও ওয়াই-কানেকশসসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিপিপি অনুমোদন করা হয়।
ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পের অর্থায়নে করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা দিবে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ। বাকি ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ টাকা ব্যয় হয়ে সরকারি ফান্ড থেকে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি হয়। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ॥ রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে পর্যটননগরী কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হয়েছে। এই রেলপথটিও আন্তর্জাতিক রেলওয়ে রুট ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের অন্তর্ভুক্ত।
তাই দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে রামু থেকে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে না। তাই দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে গত আগস্ট মাসে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় রেলপথের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে আগামী অক্টোবরে রেলপথটি চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গত আগস্ট মাসে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় রেলপথের সাতকানিয়া এলাকায় নতুন রেলপথের কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করা হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে রেলপথটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে উদ্বোধনের সময় নির্ধারণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে প্রকল্পে ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি দুটি অংশে ভাগ করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত প্রথম অংশে যৌথভাবে কাজ করছে চায়নার সিআরইসি ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।
এ ছাড়া চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের কাজ যৌথভাবে করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়নার সিসিইসিসি ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। প্রকল্পটির আওতায় দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ভ্রমণ করতে পারবে পর্যটকরা। এ ছাড়া স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প ॥ বিশে^র সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোড সুন্দরবনে পর্যটক আকৃষ্টি ও বন্দরের পণ্য পরিবহন আরও সহজ করতে ৭৩ বছর পর রেলপথ যুক্ত হচ্ছে মোংলা সমুদ্র বন্দরে। এ জন্য খুলনা-মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতদিন রেলপথ না থাকার কারণে মোংলা বন্দরের বড় বড় কন্টেনার পরিবহনে সমস্যা হতো। এছাড়া এই রেলপথ চালু হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জনকণ্ঠ’কে বলেন, ‘মোংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য খুলনা থেকে বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ ডিফেক্ট লায়ারলিটি পিরিয়ডসহ ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের মধ্যে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে।’
প্রকল্প সূত্রে জানায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। দুই দফা ডিপিপি সংশোধনের পর প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ রয়েছে দুই হাজার ৯৪৮ কোটি এক লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
বাকি এক হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সরকারি ফান্ড থেকে ব্যয় হয়। খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি তিনটি ভাগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ রেললাইন নির্মাণ, প্যাকেজ-২ রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, প্যাকেজ-৩ টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার।
এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। রূপসা নদীর ওপরে নির্মাণ করা পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রূপসা রেলসেতু। এই সেতুর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে।
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ ॥ বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন এই ইন্টারচেঞ্জ রুট চালুর করার জন্য বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে ভারতীয় বর্ডার পর্যন্ত বাংলাদেশের অংশে ১০ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে এই রেলপথটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমানের রেলপথের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরে রেলপথটি চালু করা হবে বলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের ১০টি সীমান্ত পথে হচ্ছে রেল কানেক্টিভিটি। এর মধ্যে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর ও চিলাহাটি-হলদিবাড়ি এই পাঁচটি সীমান্তপথে বর্তমানে ট্রেন চলাচল করছে।
এ ছাড়া শাহবাজপুর-মহিশাসন, বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা ও মোগলহাট-গিতলদহ এই তিনটি রেলপথ সংস্কারে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন করে আখাউড়া-আগরতলা ও ফেনী-বিলোনিয়া দুটি রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেলপথগুলো চালু হলে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটানের মধ্যে পণ্য ও যাত্রীবাহী রেল যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।’