জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের ‘জনগণের পুলিশ’ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা এটা হতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পুলিশের বিকল্প নেই। তাই আমার প্রথম পদক্ষেপ স্মার্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গঠন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ডিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে তিনি যুগান্তরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন। বিস্তারিত তুলে ধরেন তার কর্মপরিকল্পনার কথা। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে মানুষের বিপদে-আপদে ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হবে ডিএমপির প্রতিটি থানা। আমরা যে জনগণের পুলিশ হয়েছি-এর প্রতিফলন ঘটবে থানাগুলোতে।
ডিএমপি প্রধান হাবিবুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগ থেকে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন পুলিশ বাহিনীর বীর সদস্যরা। মানুষের জানমাল রক্ষায় তারা নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। দিনটি মাথায় রেখেই ডিএমপির প্রতিটি সদস্যকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। থানাগুলোকে কিভাবে অধিকতর জনবান্ধব করবেন-জানতে চাইলে বলেন, প্রত্যেক অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি), অতিরিক্তি উপকমিশনার (এডিসি) এবং সহকারী কমিশনার (এসি) প্রতিনিয়ত থানা মনিটরিং করবেন। এছাড়া সব থানার কার্যক্রমকে ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ডিএমপি সদরে বসেই যাতে থানায় কী হচ্ছে তা সরাসরি দেখা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে। থানার ডিউটি অফিসার, সেন্ট্রি পোস্ট এবং হাজতখানাসহ সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরার সংযোগ থাকবে ডিএমপি সদর দপ্তরেও।
নতুন কমিশনার বলেন, ডিএমপি সদর দপ্তরে থাকবে থানা মনিটরিং সেন্টার। মনিটরিং সেন্টারে থাকা বড় পর্দাতে ভেসে উঠবে থানাগুলোর লাইভ চিত্র। এ সেন্টারে সার্বক্ষণিক এক বা একাধিক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বরত কর্মকর্তা যদি কার্যক্রমে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখতে পান তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই কৈফিয়ত তলব করতে পারবেন থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের। কেউ থানার কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলে এসি, এডিসি এবং ডিসির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এসব স্থানে সমাধান না পেলে সরাসরি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে একটি হটলাইন চালু করা হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক অবস্থা ও প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সাইবার ক্রাইম। ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, ইউটিউবসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিত্যনতুন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর অনেকইে জানেন না কোথায় অভিযোগ দিতে হবে? কীভাবে এসব প্রতিকার পাওয়া যাবে? তাই সাইবার অপরাধ দমন এবং মানুষকে এ থেকে পরিত্রাণ দিতে ডিএমপির সাইবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠন করা হবে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার। এ সেন্টারে মানুষ সরাসরি হাজির হয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিতে পারবেন। সাধারণ মানুষ যেভাবে সহজেই থানায় প্রবেশ করতে পারেন. ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারেও সেভাবে প্রবেশ করতে পারবেন। যারা অভিযোগ দেবেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি ঘটলে কীভাবে মোকাবিলা করবেন-জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ডিএমপি দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিট। দক্ষ ও চৌকশ কর্মকর্তারাই এখানে কাজ করেন। অতীতে জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ডিএমপি যেভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবারও সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করা হতে পারে। আন্দোলনের নামে কেউ জ্বালাও-পোড়াও করলে, মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে, ভাঙচুর করলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। যে কোনো নাশকতা রুখে দিতে পুলিশ প্রস্তুত।
নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নিজস্ব কোনো উদ্ভাবনী ধারণা আছে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপি প্রধান বলেন, আমি অতীতে যেসব কর্মস্থলে কাজ করেছি সেসব স্থানে উদ্ভাবনী ধারণাকে কাজে লাগিয়ে অনেক সুফল পেয়েছি। ডিএমপিতেও এ ধারণা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে চাই। মডেল থানাগুলোকে সত্যিকার অর্থে মডেল হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেব। থানায় কোনো ধরনের হয়রানি বরদাস্ত করা হবে না। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রুখতে নগরীর বিশেষ বিশেষ পয়েন্টকে আনা হবে সিসি ক্যামেরার আওতায়। এসব ক্যামেরা মনিটরিংয়ের জন্য থাকবে বিশেষ টিম। ওই টিম স্পট থেকেই ছিনতাইকারী ধরে ফেলবে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সঙ্গে বিশেষ টিমের সংযোগ থাকবে, যাতে ঘটনা ঘটনার ২ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে।