রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের মধ্যে ৬টি আসনে নেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট হচ্ছে ৩৮ আসনে। রাজশাহীর স্বতন্ত্রবিহীন ৬ আসনের মধ্যে নৌকার ৫ প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে নির্ভার আছেন। অন্যদিকে এই বিভাগের ৬ জন হেভিওয়েট প্রার্থীকে জয় পেতে ভোটের মাঠে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে। এলাকাবাসী বলছেন, এই ৬ হেভিওয়েটের আসনে দলেরই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীরা মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন।
এসব আসনে জয় নিশ্চিতে হেভিওয়েটরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাকি ২৭ আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক আসনে স্বতন্ত্রদের দখলে রয়েছে ভোটের মাঠ। এর মধ্যে থেকে কতজন জয় পাবেন তা নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগের হেভিওয়েটদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট করলেও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন। এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা ভোটের মাঠে এককভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন।
দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী অধ্যক্ষ বাদশার কাঁচি প্রতীকের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এই আসনের নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা এখনো জমাতে পারেননি ভোটের প্রচার-প্রচারণা। তবে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভোটের আশা এখনো ছাড়েননি।
রাজশাহী বিভাগের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁ-১ (পোরশা-নিয়ামতপুর-সাপাহার) আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান তোতার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন। এলাকাবাসী বলছেন, মন্ত্রী ধারণা করেননি তাকে ভোটের এতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। জানা গেছে, নওগাঁর তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের নিয়ামতপুরে সাধন মজুমদারের বাড়ি। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেকুজ্জামান তোতার বাড়িও নিয়ামতপুরে।
আদিবাসী অধ্যুষিত নিয়ামতপুর উপজেলায় সাধন চন্দ্র মজুমদার কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও পোরশা ও সাপাহারে তার সমর্থন ততটা জোরালো নয় বলে এলাকাবাসী জানান। এলাকাবাসী বলছেন, মন্ত্রী হওয়ার পর সাধন মজুমদার নিজ এলাকার বাইরে সময় দেননি। এ কারণে পোরশা ও সাপাহারে স্বতন্ত্র তোতা ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
পাবনা-১ (বেড়া-সাথিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকেও আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাঈদকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে ভোটের মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাঈদকে ঠেকাতে তার প্রচার-প্রচারণায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাবনার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে ইতোমধ্যে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে ভোটের প্রচার শুরুর পর। টুকু বিরোধী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাঈদের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
নাটোর-৪ (সিংড়া) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে ভোটের মাঠে পড়তে হয়েছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে। দলের নেতাকর্মীদের বড় অংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিকের পক্ষে। তারা শফিকের ঈগল প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছেন। একদিকে পলক যেমন উন্নয়নের কথা বলে ভোট চাইছেন, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী শফিক সিংড়া আওয়ামী লীগকে জামায়াত-বিএনপি মুক্ত করার কথা বলে ভোট চাইছেন।
রাজশাহী বিভাগের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সামনে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন এই আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও এবারের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, ভোটের প্রচারের চূড়ান্ত সময়েও দলের নেতাকর্মীদের তার পক্ষে এক করতে পারেননি শাহরিয়ার আলম। অন্যদিকে চারঘাট-বাঘার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হানের কাঁচি প্রতীকের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়হান বলেন, জনগণের রায় নিশ্চিতে প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার।
এদিকে রাজশাহী বিভাগের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছে। স্বপন জাতীয় সংসদে দলীয় হুইপও। এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী কাঁচি প্রতীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। এই আসনে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সাঈদ নুরুল্লাহ। ফলে আসনটিতে হেভিওয়েট স্বপনকে ভোটের মাঠে দলের স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণাতেও তিন প্রার্থী নিজেদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরছেন।
স্বতন্ত্রবিহীন আ.লীগের ৬ প্রার্থীর ৫ জন নির্ভার : রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের মধ্যে ৬টিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তবে এসব আসনে বিএনএমসহ অন্য দলের প্রার্থীরা রয়েছেন। এই ৬টি আসনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনটি ছাড়া বাকি ৫টিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নির্ভার বলে মনে করা হচ্ছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদকে বিএনএম প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী ভোটের মাঠে নেমেছেন বিএনএম প্রার্থী মাওলানা মতিনের নোঙর প্রতীকের পক্ষে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল ওদুদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ছাড়া দেশের আর কোনো আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনএম প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে নামেননি। জানা গেছে, দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে না থাকায় অস্থির সময় পার করছেন ওদুদ। মাঝে মাঝে ভিডিও ছেড়ে হুমকি দিচ্ছেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর। এরপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সীমিত কর্মী সমর্থক নিয়ে ওদুদকে প্রচারে নামতে হচ্ছে।
এদিকে রাজশাহী-৩ (মোহনপুর-পবা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে বিএনএমের মতিউর রহমান মন্টু থাকলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। এছাড়া সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী তানভির শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (কামারখন্দ-আংশিক সদর) আসনে জান্নাত আরা হেনরি, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম ও বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মজিবুর রহমান মজনু জয়ের ব্যাপারে অনেকটা নির্ভার বলে জানা গেছে। কারণ এসব আসনে আ.লীগের শক্তিশালী কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।