কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইতোমধ্যে ১৬০ একরের ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। অনেকেই বিশ্ব ইজতেমার মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ পথের দুই পাশে অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মাঠের উত্তর-পশ্চিম দিকে বিভিন্ন দেশের অতিথিদের জন্য আন্তর্জাতিক নিবাস তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে ইজতেমা ময়দানের আশপাশে বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর। জিকির-আজকারে সময় পার করছেন মুসল্লিরা। শুক্রবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হবে। তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আবদুন নূর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রথম পর্বের ইজতেমায় যোগ দিতে গত বুধবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের উপস্থিতি বাড়ছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন ও হেঁটে টুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। আখেরি মুনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদের পূর্ব পাশে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশী মুসল্লিদের কামড়ার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের মিম্বরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। বয়ান মঞ্চ থেকে আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করা হবে। ইজতেমার প্রচলিত রেওয়াজ অনুসারে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় মহাসমাবেশ কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই শুরু হবে। সভাপতিহীন এই মহাসমাবেশে থাকছে না কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি। নাম-পদবি ছাড়াই বিভিন্ন দেশের ওলামায়ে কেরামরা এই সম্মেলনে তাবলিগের জামাতের রীতি অনুসারে শুধু ধর্মীয় অরাজনৈতিক বয়ান পেশ করবেন। এবারের ইজতেমায় চট সঙ্কট থাকায় নিজ উদ্যোগে সামিয়ানা ও চট টাঙানোর কাজ করতে দেখা গেছে মুসল্লিদেরকে।
ইজতেমার প্রথম পর্বের আয়োজক মাওলানা জোবায়েরপন্থী জামাত। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেলা দেড়টার দিকে কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের প্রথম দিন দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজে ইমামতি করবেন। ১৬০ একরের পুরো ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের অলিগলিতেও কাতারবদ্ধ হয়ে জুমার নামাজে অংশ নেবেন মুসল্লিরা। বৃহত্তম জুমার নামাজে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তবলিগ জামাতের মুসল্লি ছাড়াও গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিতে থাকেন। চার দিন বিরতির পর ভারতের তাবলিগ মারকাজের প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধালবীর অনুসারিরা ৯, ১০ এবং ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক ।
প্রথম পর্বের মিডিয়াবিষয়ক জিম্মাদার মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন খিত্তায় নির্ধারিত বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা এসে অবস্থান নেবেন। আগত মুসল্লিদের ইজতেমার কর্মসূচিতে অংশ নিতে ও তাদের সব ধরনের সেবা প্রদানে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের মাঠটিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ছাউনির মধ্যে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তবলিগের মুসল্লিদের জন্য জেলাওয়ারি আলাদা খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। দেশ বিদেশ থেকে আসা মেহমানরা ঢাকার কাকরাইল মসজিদ, টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন মসজিদে গাস্তের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে আন্তর্জাতিক নিবাসে বিদেশী মেহমানদের খাবার সরবরাহ, খাবার তৈরি ও পরিবেশনসহ খেদমতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা হয়েছে।
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদেরকে বিনামূল্যে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক ১০টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে। হাসপাতালে অতিরিক্ত বেড স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে অর্ধশতাধিক ফ্রি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী বর্জ্য অপসারণ ও পয়ঃপ্রণালী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আগতদের জন্য ১০টি গভীর নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ও অজু-গোসলখানা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে কঞ্জাভেঞ্চি টিম প্রস্তুত রয়েছে।