গত ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে বাসাবাড়িতে বা নিজের কাছে রাখার প্রবণতা বেড়েছে অনেক। ফলে অবৈধ বা বৈধ যাই হোক না কেন, টাকা নিজের কাছে রাখতে এখন বাসাবাড়ির জন্য সিন্দুক, লকার ও আলমারি কিনছেন অনেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ টাকা লুকিয়ে রাখতে স্বভাবজাত প্রবণতার অংশ হিসেবে মানুষ টাকা রাখে গোপন জায়গায়। সে বিবেচনায় বাসাবাড়িতে সিন্দুকের ব্যবহার বাড়তে পারে। ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের অন্যতম কারণও হতে পারে সিন্দুকে টাকা রাখার প্রবণতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুন শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। মাত্র ছয় মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ মোটা দাগে তিনটি হতে পারে। প্রথমত, ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সব পর্যায়ে খরচ বেড়েছে। ফলে মানুষের হাতে তুলনামূলক বেশি টাকা রাখতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা ব্যাংকে জমা না হওয়া। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কয়েক জন ব্যক্তির দুর্নীতি-ঘুষবাণিজ্য সামনে আসায় অনেকে সতর্ক হয়ে টাকা হাতে ধরে রাখছেন। তৃতীয়ত, ব্যাংকে জমা টাকা সময়মতো ফেরত পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে আস্থাহীনতা রয়েছে।
অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাংক থেকে টাকা সরানো হচ্ছে
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বৈধ ও অবৈধ দুই ধরনের অর্থই কিছু মানুষ ব্যক্তিগত সিন্দুকে রাখছেন। এর দুই ধরনের কারণ আছে। প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার আস্থাটা এখনো গড়ে ওঠেনি। যেমন—মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবে কি না; এটিএম বুথে টাকা থাকবে কি না; এ ধরনের ভীতি থেকে বাসায় সিন্দুকে টাকা রাখার প্রবণতা স্বাভাবিক। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়, অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে আসে, তাহলে ব্যাংকিং খাতে অনেক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও সিন্দুকে টাকা রাখার প্রবণতা কমে যাবে। কারণ সিন্দুকে টাকা রাখার ঝুঁকিও আছে। পোকায় খেয়ে ফেলতে পারে। ডাকাতিও হতে পারে। অনিশ্চয়তা কেটে গেলে, মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারলে, এটিএমে বুথে টাকা পেলে, ইন্টারনেট সচল থাকলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সাধারণ মানুষ সিন্দুকে টাকা রাখার প্রয়োজনবোধ করবেন না।