রাজশাহীতে পাটের বাম্পার ফলন


, আপডেট করা হয়েছে : 21-07-2025

রাজশাহীতে পাটের বাম্পার ফলন

মৌসুমের শুরুটা অবশ্য কৃষকদের জন্য অনুকূলে ছিল না। ফাল্গুন-চৈত্রে বীজ বপনের পর তীব্র খরায় পাট গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। অনেক কৃষককে বাড়তি খরচ করে গভীর নলকূপ থেকে সেচ দিতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিল পাট জাগ দেওয়া নিয়ে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট পচালে আঁশের মান নষ্ট হয়ে যায়, রঙ কালচে ও আঁশ শক্ত হয়ে বাজারে দাম অর্ধেকে নেমে আসে। তবে এবার আষাঢ় মাসজুড়ে বৃষ্টি সেই চিত্র পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবাগুলো এখন পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ।


জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীতে পহেলা আষাঢ়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে পুরো মাস ঝরেছে বৃষ্টি। এর মধ্যে আষাঢ়ের শেষ ১৫ দিন অর্থাৎ জুলাই মাসের প্রথম ১৫ দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৬৮ মিলিমিটার।


রাজশাহীর পবা, মোহনপুর ও দুর্গাপুরের মতো বিভিন্ন উপজেলায় মাঠের পর মাঠজুড়ে এখন সুস্থ-সবল পাটের সমারোহ। কৃষকরা কোমরপানিতে নেমে পাট কাটা, আঁটি বাঁধা, জাগ দেওয়া এবং আঁশ ছাড়ানোর কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত সময় পার করছেন।


রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমি। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড পরিমাণ ১৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।


পবা উপজেলার পাইকপাড়া এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির অভাবে পাট নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। সেচের খরচও দ্বিগুণ হচ্ছিল। এই বৃষ্টিতে ডোবা-নালা ভরে যাওয়ায় এখন পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কোনও চিন্তাই নেই। পানির অভাবে জাগ দিলে পাটের রঙ কালো হয়ে যায়, আমরা বলি কালো-পাট, যার দাম বাজারে কম। এখনকার পানিতে জাগ দিলে পাটের আঁশ হবে লম্বা, নরম আর ধবধবে সাদা। এই পাটেরই আসল কদর।’


এ বছর পাটের উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। বীজ, সার, কীটনাশকের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিক-সংকট ও মজুরি। পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সেলিম রেজা তার খরচের হিসাব তুলে ধরে বলেন, এক বিঘা জমিতে এবার প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পাট কাটা থেকে আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত ১০-১২ জন শ্রমিকের মজুরি বাবদই গুনতে হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। দিনমজুরের রেট এখন ৫০০-৬০০ টাকার নিচে নয়। তবে এই বিপুল খরচের বোঝা সত্ত্বেও তিনি হতাশ নন। তিনি যোগ করেন, ‘খরচ বেশি হলেও বিঘায় ফলন ১০ থেকে ১২ মণ হবে আশা করছি। আর বৃষ্টির কারণে পাটের যে মান হয়েছে, তাতে ভালো দর পেলে সব খরচ পুষিয়ে আমাদের ভালো লাভ থাকবে।’


পাটের দাম প্রসঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদফতরের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক সুমন্ত জানান, জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মানভেদে বর্তমানে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি মৌসুমের শুরুর দাম। পুরোদমে উন্নত মানের সাদা পাট বাজারে এলে দাম আরও বাড়বে বলে তারা ধারণা করছেন।


পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এ মান্নানও জানান যে, পর্যাপ্ত পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় আঁশের রঙ ও গুণগত মান চমৎকার হচ্ছে। কৃষকরা সঠিকভাবে শুকানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারলে বাজারে নিঃসন্দেহে ভালো দাম পাবেন।


রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং ফলনও খুব ভালো হয়েছে। কৃষকদের দুশ্চিন্তার কারণ ছিল পাট জাগ দেওয়া, যা সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ কেটে গেছে। এতে আঁশের মান উন্নত হবে, যা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার