ড্রাগন ও পেয়ারার মতো সারা বছর কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সারাদেশে স্থাপন করা হবে নতুন চারটি হর্টিকালচার সেন্টার। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকানন পরিচর্যারও। এমন সব প্রস্তাব রাখা হয়েছে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের ৩য় সংশোধনীতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) সভায় উঠবে বলে জানা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ শুরু করে সরকার। ৫১ জেলার ৪০২ উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। ২০২০ সালের ১০ মার্চ এর ২য় সংশোধনী অনুমোদন পায়। তৃতীয় সংশোধনীটি ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও প্রকল্প স্ট্যায়ারিং কমিটি। মূল্যায়ন কমিটির সভায় (পিইসি) তা অনুমোদন পাওয়ায় চূড়ান্ত অনুমোনের জন্য একনেকে উঠছে। প্রকল্পটির ২য় সংশোধনী পর্যন্ত ব্যয় ছিল ৪৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ৩য় সংশোধনীতে ২১১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ফলে এর মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৬৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর ১১ শতাংশ হারে ফলের উৎপাদন বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতেই প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আমরা ঐতিহাসিক
মুজিবনগরের আম্রকানন পরিচর্যার উদ্যোগ নেব। ড্রাগন ও পেয়ারার মতো সারাবছর যাতে কাঁঠাল উৎপাদন হয় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে। উন্নতমানের এমডি-২ আনারস ও আঠাবিহীন কাঁঠালের সম্প্রসারণে আড়াই হাজার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহাসিক মুজিবনগরে প্রায় ৩৬ একর এলাকাজুড়ে আম্রকাননে ছোট-বড় প্রায় ১১৭০টি আমগাছ রয়েছে। সংশোধনী প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ আমগাছগুলো বর্তমানে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত এবং পরগাছার কারণে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।ফলে এর পরিচর্যা প্রয়োজন।
প্রকল্প পরিচালক জানান, আম্রকাননে ১১৭০টি গাছ পরিচর্যা করলে কয়েকশ টন আম হবে। এক গাছে আম হবে ২০-২৫ মণ। প্রায় ১১০০ গাছে উৎপাদন ১১০০ টন এর কম হবে না। কাঁচাআমের দাম ৫০ টাকা কেজি ধরলেও বছরে এই বাগান থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে কেবল যত্নের অভাবে, এখন একটি আমও হয় না।
প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, সংরক্ষণযোগ্য ও খাওয়ার যোগ্য বেশি থাকায় এমডি-২ জাতের আনারস রপ্তানিযোগ্য। তাই আনারসের এ জাতটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ২ হাজার ৫০০টি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সারাবছর কাঁঠাল প্রাপ্তির লক্ষ্যে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠালের জাতটি সম্প্রসারণের জন্য সংশোধিত ডিপিপিতে মিশ্র ফল প্রদর্শনীর আওতায় সংযোজন করা হয়েছে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ৩য় সংশোধনীতে কুষ্টিয়া, ঝিকরগাছা-যশোর, মতলব চাঁদপুর ও পলাশবাড়ি/সাদুল্লাপুর গাইবান্ধায় ৪টি নতুন হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনীর যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে দেশে চাহিদার তুলনায় ৬০ শতাংশ ফল উৎপাদন হচ্ছে। যে ফলগুলো উৎপাদন হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ পাওয়া যায় জুন-সেপ্টেম্বর, এ চার মাসে। শীত মৌসুমে ফল প্রাপ্তির সুবিধা কম। তাই শীতকালসহ সারাবছর প্রকল্পের আওতায় প্রচলিত, অপ্রচলিত এবং অন্যান্য দেশি-বিদেশি সম্ভাবনাময় সব ধরনের ফলের চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, বিশ্বের ১০ম মৌসুমি ফল উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। সংস্থাটির মতে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ১১.৫০ শতাংশ হারে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে বিশ্বের গড় ফল উৎপাদন হার প্রায় ৩ শতাংশ। এ প্রকল্পের শুরুতে (২০১৫-১৬) সামগ্রিকভাবে ফলের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ টন। সেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ফলের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৩৩ কোটি টনে।
প্রকল্পের আওতায় গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ড্রাগন ফলের উৎপাদন প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে, বছরব্যাপী পেয়ারা ও আমপ্রাপ্তি এবং বাসুন্দরী কুলের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের জন্য ফলের চারা ও কলম সহজলভ্যকরণে ওই প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর, পটুয়াখালী, নানিয়ারচর রাঙামাটি, বিজয়নগর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরাসহ মোট ৯টি হর্টিকালচার সেন্টার নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং নেত্রকোনা, পঞ্চগড় ও নড়াইলে তিনটি হর্টিকালচার সেন্টার নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব সেন্টার থেকে চারা ও কলম বিক্রিবাবদ রাজস্ব আয় ২ কোটি হতে ৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।