রাজশাহী মহানগরীতে অটোরিক্সা ছিনতাই ছিনতাইকারী চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজশাহী নগরীর কাটাখালী থানা পুলিশ গতকাল সোমবার বিকেলে শ্যমপুর থান্দারপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, রাজশাহী মহানগরীর পবা থানার মারিয়া এলাকার আসলাম আলীর ছেলে মুকুল হোসেন। বর্তমানে তিনি কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার বাসিন্দা। কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার মৃত নাসের আলীর ছেলে রাব্বী আলী এবং একই এলাকার মৃত পালানের ছেলে শিহাব আলী। মতিহার থানার চরশ্যামপুর এলাকার শুকচাঁদের ছেলে নাজমুল ইসলাম এবং ডাসমারী পূর্বপাড়ার মুনছুর রহমানের ছেলে নাজিউর রহমান মৃদুল। কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার আশরাফ আলীর ছেলে রকি এবং রকির স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রিমা ও সমসাদীপুর এলাকার মৃত মোতালেব আলীর ছেলে আশরাফ আলী।
নগর পুলিশ জানায়, রাজশাহীর মহানগরীর মতিহার থানার পশ্চিম বুধপাড়া এলাকার অটোরিক্সা চালক শাহাজ উদ্দিন (৪৫) গত ৬ মে রাত সাড়ে ৭ টায় রাজশাহী শহরের সাহেব বাজার রহমানিয়া হোটেলের সামনে ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তিন ছিনতাইকারী যাত্রীবেশে তাকে কাটাখালী থানার মাহেন্দ্রা বাইপাস সড়ক এলাকায় ভাড়ায় যাওয়ার কথা বললে তিনি ওই তিনজনকে নিয়ে রওনা হন।
রাত ৯টায় মাহেন্দ্রা বাইপাস মহাসড়ক এলাকায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা তাকে থামতে বলে। সেখানে তারা অটোরিক্সা থেকে নেমে একটি দোকান হতে সিগারেট নিয়ে আবার ফিরে আসে। হঠাৎ যাত্রীবেশে অটোরিক্সার পিছনে বসে থাকা দুইজন ছিনতাইকারী চালক শাহাজ উদ্দিনকে গামছা দিয়ে দুই হাত বেধে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিল ঘুষি মারতে থাকে। তারা তাকে খুন করার ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন জোর করে কেড়ে নিয়ে দৌঁড়ে হরিয়ানের দিকে চলে যায়। অটোরিক্সার সামনে যাত্রীবেশে বসে থাকা তাদের অপর সহযোগী অটোরিক্সা নিয়ে বেলপুকুরের দিকে চলে যায়। এ সংক্রান্তে তিনি কাটাখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পরে শাহাজ উদ্দিন থানায় অভিযোগ করলে উপ-পুলিশ কমিশনার (মতিহার) মধুসুদন রায়ের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার একরামুল হকের তত্বাবধানে কাটাখালী থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এসআই আকতার আলী গ্রেফতার ও অটোরিক্স উদ্ধার অভিযানে নামে। কাটাখালী থানার ওই টিম আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় আসামিদের সনাক্ত করে। এরপর গত ৮ মে বিকাল সাড়ে ৩ টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহানগরীর কাটাখালী থানার শ্যমপুর থান্দারপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি শিহাব আলীকে গ্রেফতার করে। এসময় শিহাবের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত শিহাব জানায় তার অপর দুইজন সহযোগী মুকুল ও রাব্বী। তারা তিনজন একত্রে এই ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটায়। শিহাবের দেওয়া তথ্য মতে কাটাখালী থানার ওই টিম বিকাল পৌণে ৫ টায় শ্যমপুর থান্দারপাড়া এলাকা হতে আসামি মুকুল ও রাব্বীকে গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা তিনজন ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে। তারা আরও জানায় ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি বিক্রয়ের জন্য তাদের সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগী আসামি নাজমুল হোসেন (২০), নাজিউর রহমান মৃদুল (২২), রকি (২৮) ও মোসা: সুমাইয়া আক্তার রিমাকে (২৪) দিয়েছে। ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি খুলে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করার জন্য আসামি সুমাইয়া আক্তার রিমার বাড়িতে রেখেছে বলেও জানায়।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাটাখালী থানা পুলিশ শ্যামপুর থান্দারপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোসা: সুমাইয়া আক্তার রিমা ও তার স্বামী রকি এবং ভাই নাজমুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এসময় সেখান থেকে অটোরিক্সাটির ব্যাটারী ব্যতীত বিভিন্ন অংশ উদ্ধার হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬:৩০টায় অপর সহযোগী নাজিউর রহমান মৃদুলকে গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি সুমাইয়া আক্তার রিমা জানায়, ছিনতাই করা অটোরিক্সার ব্যাটারীটি তাদের সহযোগী আসামি মো: আশরাফ আলীর মটর পার্টসের দোকানে বিক্রয়ের জন্য আশরাফ আলীকে দিয়েছে। এরপর কাটাখালী থানা পুলিশের ওই টিম অভিযান পরিচালনা করে আসামি আশরাফ আলীকে গ্রেফতার করে এবং ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সার চারটি ব্যাটারী উদ্ধার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা সকলে সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে কাটাখালী থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করা হয়েছে।