রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের দুপুর গড়িয়ে গেলেও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন কমেনি। সকাল থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন তাঁরা। ভোটাররা বলছেন, ইভিএমে ভোট দিতে অনেক দেরি হচ্ছে। এ কারণে ভোটারদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিচ্ছেন রাজশাহী সিটির ভোটাররা। তাই সময় বেশি লাগছে। বিশেষ করে নারীদের ভোট প্রয়োগে বেশি দেরি হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও কারিগরি সমস্যাও দেখা দিচ্ছে, কারিগরি টিমের সদস্যরা সমাধান করছেন।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সব কেন্দ্রেই ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। নগরীর ৪ ও ১৯ নম্বরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছাড়া অন্য কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। ভোট গ্রহণ নিয়েও প্রার্থীদের কোনো অভিযোগ নেই। ফলে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন।
দুপুর ১২টার দিকে নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর কেন্দ্রটিতে ভোটার কমে গেলেও এক ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়। কেন্দ্রের সামনে প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ লাইন দেখা যায় নারীদের।
ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে কেশবপুর মহল্লার বাসিন্দা সুলতানা খাতুন বলেন, ‘এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বুথের সামনে গেলাম। তারপর দেখলাম একজনের ভোট দিতেই পাঁচ-সাত মিনিট লেগে গেল। তার ভোট দেওয়া হলে আমি দিলাম। প্রথমবার ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য বুঝতে একটু সময় লেগেছে।
নারীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একই মহল্লার বাসিন্দা চানমনি বেগম। তিনি বলেন, ‘মারামারির পর ভোট দিতে এসেছি। লাইনে দাঁড়ানো দেড় ঘণ্টা হয়ে গেল। আরও ২০ মিনিট মনে হয় লাগবে।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বিবেকানন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘পুরুষের ভোট একটু তাড়াতাড়ি হচ্ছে। কিন্তু বারবার বোঝানোর পরও নারীরা বুঝতে পারছেন না। তাদের ভোট দিতে সময় লাগছে। এ জন্য ভোট গ্রহণে একটু ধীরগতি। তা-ও দুপুর ১টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৩টি ভোট গ্রহণ করা হয়। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৩৪২ জন।’
রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুল কেন্দ্রে গিয়েও ভোট গ্রহণে ধীরগতি দেখা যায়। এই কেন্দ্রের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্বাস আলী সরদার বলেন, ‘ইভিএমে ভোট গ্রহণে সময় লাগছে বেশি। একটা বুথের ইভিএম তো সকালেই নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা পাল্টে দিয়েছে।’
এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনের কারিগরি টিমের সদস্য মোসাদ্দুল হক চারটি ইভিএম মেশিন নিয়ে বসে আছেন। তিনি বললেন, ‘একটি ইভিএম মেশিনে বাটনে কাজ করছে না। সেটি পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি অতিরিক্ত ইভিএম এনে রাখা হয়েছে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইভিএমে ভোট দিতে একটু সময় বেশি লাগছে। তবে ভোটাররা যদি কেন্দ্রের ভেতরে চলে আসেন, তাহলে ভোট না নিয়ে কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। যতই সময় লাগুক, সবারই ভোট গ্রহণ করা হবে। এটাই কমিশনের সিদ্ধান্ত।’
বুধবার সকাল ৮টা থেকে শহরের ৩০টি ওয়ার্ডের ১৫৫টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনে তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ১১২ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪৬ জন সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী আছেন।