১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৭:২৯:১৯ অপরাহ্ন
গণপূর্ত অধিদপ্তর: অপরাধ প্রমাণিত হলেও অধরা প্রকৌশলীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৭-২০২৩
গণপূর্ত অধিদপ্তর: অপরাধ প্রমাণিত হলেও অধরা প্রকৌশলীরা

দরপত্রে অনিয়ম, কাজের আগে বিল পরিশোধ, একসঙ্গে দুই সংস্থায় চাকরি এবং চাকরিচ্যুত হওয়ার পর পুনরায় চাকরিতে ফেরার মতো ঘটনাও ঘটছে গণপূর্ত অধিদপ্তরে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রথমে ঢাকঢোল পিটিয়ে তদন্ত শুরু হলেও পরে সব মিটমাট হয়ে যায়। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া প্রকৌশলীদের আর শাস্তি পেতে হয় না।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যারা অনিয়ম করছে তাদের আমরা ছাড় দিচ্ছি না। এমনকি অন্যায় করে যারা আগে নানাভাবে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছিল, তাদের নতুন করে তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’


অনুসন্ধানে জানা যায়, গণপূর্ত ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. শহিদুল আলম চাকরিজীবনে বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন লিয়েনে (বিনা বেতনে দীর্ঘমেয়াদি ছুটি) বিভিন্ন দাতা সংস্থায় কাজ করে। তিনি লিয়েন নিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) কর্মরত থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে সরকারি বেতন নেন বলে অভিযোগ করে এডিবির দুর্নীতি প্রতিরোধ শাখা। কিন্তু অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে তিনি উল্টো পদোন্নতি বাগিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়)। এ বিষয়ে মো. শহিদুল আলম বলেন, ‘আমার বিষয়ে যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়।’


একাধিক প্রকৌশলী জানান, গণপূর্ত ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের নায়লা আহমেদ উপবিভাগীয় প্রকৌশলী থাকাকালে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে স্বামীর সঙ্গে বিদেশ চলে যান। তিন বছরেরও বেশি সময় কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একপর্যায়ে তিনি দেশে ফিরে মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সহায়তায় নথি পরিবর্তন করে চাকরিতে যোগ দেন।


নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ার পর ক্যাডার পরিবর্তন করে উপসচিব হন। বর্তমানে তিনি যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নায়লা আহমেদ বলেন, ‘আমি শিক্ষা ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে ছিলাম। একপর্যায়ে ছুটি বাড়ানোর আবেদন করি। এখানে আইনের ব্যত্যয় হয়নি।’


বর্তমান এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকায় থাকাকালে তিনি জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠানকে কাজ ছাড়াই বিল বাবদ সাড়ে ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছিলেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরেক প্রকৌশলী দাপ্তরিক চিঠিতে বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স নির্মাণ প্রকল্পে ১৯ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৯৪৫ টাকার কাজের বিপরীতে বিল দেওয়া হয় ২৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা বেশি নিয়েছে। ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় নতুন করে তদন্ত 

শুরু করেছে।


জানা যায়, একজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলীকে ২০০৯ সালে ভোলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হলেও তিনি বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ছিলেন। কারণ দর্শানোর নোটিশেরও জবাব দেননি। এভাবে প্রায় তিন বছর কাটিয়ে দিলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।


একপর্যায়ে তাঁকে চাকরিচ্যুত করারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তিনি বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। আরেকজন প্রকৌশলী গোপালগঞ্জে একটি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকাকালে ক্রয় বিধিমালা না মানায় সরকারের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়। সেই সঙ্গে সীমানাপ্রাচীর, ভবনের ছাদসহ বেশ কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ঠিকাদারকে বিল দেন। ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত কমিটি। কিন্তু তিনি কোনো শাস্তি পাননি। এ ছাড়া একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে একসঙ্গে দুই দেশের দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করার অভিযোগ সবার জানা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চার মাস ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় সম্প্রতি তাঁর নামে বিভাগীয় মামলা করেছে মন্ত্রণালয়।


এসব বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার বলেন, ‘যে কয়েকটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে, তা নিয়েই আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছু সহকর্মী যে অপরাধ করছেন না; তা বলব না। গুটি কয়েকের জন্য সবার বদনাম হয়। তাই আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। যাঁর অপরাধ তাঁকেই দায় নিতে হবে।’

শেয়ার করুন