সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁদের দ্বন্দ্বে উপজেলা আওয়ামী লীগও বিভক্ত। এমপি তানভীর ও প্রতিপক্ষ ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন পৃথকভাবে। দুপক্ষের এই দ্বন্দ্ব ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে।
এমপি তানভীর ইমামের বিরোধীরা বলছেন, তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করছেন না। তাই তাঁরা পরিবর্তন চান। তবে তানভীর ইমাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, উল্লাপাড়ায় দল আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং নেতা-কর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ। কয়েকজন ব্যক্তি দলের গঠনতন্ত্র না মেনে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নেতাদের দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম। উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা তাঁর পক্ষে। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছয়জন। তাঁরা হলেন উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শফিকুল ইসলাম শফি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকাত ওসমান, উল্লাপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হেদায়েত আহমেদ এলান, সহসভাপতি জাহিদুল হক এবং বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি নবী নেওয়াজ খান বিনু। তাঁদের অভিযোগ, এমপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এমপির ব্যক্তিগত সহকারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জল এবং যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজকে সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শওকাত ওসমান বলেন, উল্লাপাড়ায় দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন নেই। যাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে, তাঁরাই দল নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁরা পরিবর্তন আশা করছেন। এ কারণে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছয়জন এক হয়েছেন। একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করছেন। এই আসনে তাঁদের মধ্যে যে কাউকে মনোনয়ন দিলে পরিবর্তন আসবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের পোস্টার, ব্যানারে উল্লাপাড়া ছেয়ে গেছে। এমপি তানভীর বিরোধী ছয়জন বিভিন্ন কর্মসূচিতে একই মঞ্চে একসঙ্গে বসছেন এবং নিজেদের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঘোষণা করছেন। দলীয় সব কর্মকাণ্ডেই তাঁরা একসঙ্গে। যা নিয়ে উপজেলায় আলোচনা চলছে।
উল্লাপাড়ায় একসময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ মির্জা। তিনি ১৯৯৬ সালে এই আসনের এমপি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই আসনে ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী শফিকুল ইসলাম শফি। ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন তানভীর ইমাম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে। ২০১৮ সালেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর অন্যতম হেদায়েত আহমেদ এলান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যেসব নেতা-কর্মী রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব কারণে আমরা মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।’
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা এমপির সঙ্গে আছি। এমপিও আমাদের সঙ্গে আছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। যেকোনো নেতা-কর্মী দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। যাঁরা দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনে অন্যত্র সভা-সমাবেশ করছেন, তাঁদের বিষয়ে জেলা কমিটিকে অবগত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, যেসব নেতার সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক মাঠে নেমেছে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অপরাধী নন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
সার্বিক বিষয়ে এমপি তানভীর ইমাম বলেন, ‘যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরাই গঠনতন্ত্র মানেন না। গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে আলাদা অনুষ্ঠান করছেন। আমার সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীরা আছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।’