রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেস সদস্য অ্যানড্রু গারবারিনো শুক্রবার নিউইয়র্কে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ১৪ বছর ধরে যে উন্নয়ন ঘটেছে সেই ধারা অব্যাহত রাখতেই শেখ হাসিনাকে আবারও সুযোগ দেওয়া উচিত।’
অ্যানড্রু গারবারিনো মার্কিন কংগ্রেসে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিবিষয়ক কমিটির অধীন সাইবার সিকিউরিটি ও অবকাঠামো সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এবং সামনের জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, অনেক দেশেরই উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা। নিউইয়র্ক কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-২ থেকে নির্বাচিত অ্যানড্রু গারবারিনো বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক শুনেছি। গত ১৪ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে সফলতা দেখিয়েছে তাও জেনেছি। আরও জানি যে, সামনের জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, সেটি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের স্বার্থে তিনি (শেখ হাসিনা) সমস্ত দায়িত্ব স্বাধীনভাবে কর্মরত নির্বাচন কমিশনের কাছে অর্পণ করবেন এবং বিশ্বকে অবহিত করবেন যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বাংলাদেশ কার্পণ্য করে না। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অসাধারণ অগ্রগতি করেছে, বিশেষ করে জ্বালানি এবং অবকাঠামো খাতে, আশা করি তা অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে সন্ত্রাস নির্মূলে, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে চলমান জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকা জরুরি।’ অ্যানড্রু গারবারিনো বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি করোনাকালেও মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে বাংলাদেশ যে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে তা অন্যান্য দেশের এগিয়ে চলার জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। কংগ্রেসম্যান অ্যানড্রু কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসে যোগদান করেন ১৭ আগস্ট। তাই নিউইয়র্কের প্রবাসীরা ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় লং আইল্যান্ডে তাঁকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান বিশিষ্টজনেরা। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এ আয়োজনের সামগ্রিক সমন্বয়ে ছিলেন মূলধারায় প্রবাসীদের পথিকৃৎ মোর্শেদ আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের মিয়া এবং নিউ আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক ক্লাবের নেতা আহনাফ আলম। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুববিষয়ক সম্পাদক এবং জেবিবিএ’র সভাপতি ড. মাহাবুবুর রহমান টুকু, জেবিবিএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলতান আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ এবং কুইন্স থেকে নির্বাচিত জুডিশিয়াল ডেলিগেট নূসরাত আলম উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় বাংলাদেশের সাফল্য উপস্থাপন করেন। তাঁরা বাংলাদেশের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে সরব থাকার অভিপ্রায়ে কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসে যোগদানের জন্য অ্যানড্রু গারবারিনোকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। কংগ্রেসম্যান অ্যানড্রু এ সময় আরও বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি শান্তিসেনা সরবরাহ করছে বাংলাদেশ। বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে এটা এক অনন্য উদাহরণ। শুধু তাই নয়, শান্তির পরিক্রমায় ২ শতাধিক বাংলাদেশি সেনা তাদের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করেননি। একইভাবে নিজেরা নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকা সত্ত্বেও ১৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় এক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।বঙ্গবন্ধুর ঘাতক হিসেবে দণ্ডিত রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মানবিকতার ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়েছে, এহেন অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় জাতিসংঘে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই ঘাতককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প তাঁর অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঘাতকের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া অবলম্বনের জন্য। তা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায়ের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন তা অনুসরণ করেননি বলে বাংলাদেশ প্রতিদিন উল্লেখ করলে কংগ্রেসম্যান বলেন, ক্যাপিটল হিলে ফিরে তিনি এ বিষয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে তাঁরা শুধু পর্যবেক্ষণ/মন্তব্য উপস্থাপন ও সুপারিশ পেশ করে থাকেন। তবে অধিকাংশই ফলো করতে হয় বিভিন্ন দেশে কর্মরত রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে।
শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বের শুরুতে প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত পরিস্থিতির ভিকটিম সারা বিশ্বের মতো আমরা আমেরিকানরাও, বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। এতদসত্ত্বেও শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই অসাধারণ অগ্রগতি সাধন করেছে। ১৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার ক্ষেত্রে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট অসীম সাহা অভিযোগ করেন, কংগ্রেসে ‘টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশন’-এর শুনানি হলো ১৫ আগস্ট। দিনটি ছিল বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নৃশংসভাবে হত্যার দিন। অথচ সে ব্যাপারে ন্যূনতম কোনো মন্তব্য/মতামত উপস্থাপন না করে একতরফাভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মহলবিশেষের ইন্ধনে এভাবেই কংগ্রেসনাল কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সময়ের প্রয়োজনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই আয়োজনে বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও ছিলেন সালেহা আলম, হোসনেআরা, কাজী মনির, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর যুগ্মসম্পাদক আলিম খান আকাশ, নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা জেড এ জয়, যুবলীগ নেতা জাহিদ খন্দকার। কংগ্রেসম্যান অ্যানড্রু কথা বলার সময়ই কংগ্রেসে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির র্যাংকিং মেম্বার কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স ফোন করেন অ্যানড্রুকে। বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রবাসীদের অনুভূতির আলোকে সম্মিলিতভাবে কিছু করার ওপর জোর দিলে কংগ্রেসম্যান অ্যানড্রু তাঁকে জানান যে, ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে অন্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু একটা করতে হবে।