ওপরের দিকে পদোন্নতি দেওয়ার মতো পদ না থাকা সত্ত্বেও ক্যাডারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বড় ধরনের পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী সুপারনিউমারারি বা সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এরই মধ্যে পুলিশের পাঁচ স্তরে মোট ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অনুমোদনের জন্য শিগগিরই প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে তোলা হবে। গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগের মধ্যে এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, এই প্রক্রিয়ায় এসপি (গ্রেড-৫) থেকে শুরু করে অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) পর্যন্ত যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ক্যাডারে লোকবল নেওয়া হলেও ক্যাডার পুনর্বিন্যাস করা হয়নি। ফলে ওপরের দিকে পদ কম থাকায় অনেক যোগ্য কর্মকর্তা সময়মতো পদোন্নতি পান না। তাঁদের মনঃকষ্ট আছে। এ নিয়ে সম্প্রতি জননিরাপত্তা বিভাগ কয়েক শ সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আমরা বিষয়টি প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠাব। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে গঠিত ওই কমিটির অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২তম থেকে ৩১তম ব্যাচ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। গ্রেড-১ থেকে শুরু করে গ্রেড-৫ পর্যন্ত শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়া যাবে মাত্র ৩১ জনকে। অথচ ১২তম থেকে ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন ৭৪০ জন। এর বাইরে ৩০ ও ৩১তম ব্যাচের ৩৬৪ জন যোগ্যতা অর্জন করলেও এ দফায় তাঁদের আমলে নিচ্ছে না পুলিশ সদর দপ্তর।
সূত্রমতে, পদ কম থাকায় সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দিতে পুলিশ সদর দপ্তর প্রস্তাব পাঠায় জননিরাপত্তা বিভাগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা বিভাগ সুপার নিউমারারি পদ সৃজনসংক্রান্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সভাপতি জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ ও এনটিএমসি) মো. আলী হোসেন। গত ২০ জুলাই কমিটির সবশেষ সভায় পুলিশের ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে আছে অতিরিক্ত আইজি গ্রেড-১ পদমর্যাদার ১৫টি এবং একই পদের গ্রেড-২ মর্যাদার ৩৪টি, ডিআইজি ১৪০টি, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০টি এবং পুলিশ সুপার (এসপি) ১৯০টি পদ। এই প্রক্রিয়ায় যাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হবে, তাঁরা আগের ডেস্কেই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে নতুন পদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। এ জন্য সরকারের বছরে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭১ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ। দ্রুত পদোন্নতি পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে দুই সপ্তাহ ধরে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদবির করছেন।
বিষয়টির অগ্রগতি জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আজ জননিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে আমাদের একটি সভা হয়েছে। এটা দ্রুতই নিষ্পত্তি হবে আশা করি।’
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ ক্যাডারের আইজি বা অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) পদের অনুমোদিত পদ মাত্র ৩টি। চলতি বছর এসব পদ শূন্য না হলেও পুলিশের ১২তম ব্যাচ থেকে ১৫তম ব্যাচ পর্যন্ত এ পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা আছেন ১৫ জন।
অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) পদের অনুমোদিত পদ মাত্র ২০টি। এর মধ্যে চলতি বছর শূন্য হবে ৬টি। অথচ ১২-১৭তম ব্যাচ পর্যন্ত এ পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা আছেন ৩৪ জন। ডিআইজি (গ্রেড-৩) পদের অনুমোদিত পদ ৮৬টি। এর মধ্যে চলতি বছর শূন্য হবে ৯টি।
অথচ ১৫-২২তম ব্যাচ পর্যন্ত এ পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা ১৮৯ জন। অতিরিক্ত ডিআইজি (গ্রেড-৪) পদের অনুমোদিত পদ আছে ২০০টি। এর মধ্যে চলতি বছর শূন্য হবে ২২টি পদ। আর ১৫-২৪তম ব্যাচ পর্যন্ত এ পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা আছেন ২৬১ জন।
এসপি (গ্রেড-৫) পদের অনুমোদিত পদ ৫৯৪টি। চলতি বছর শূন্য হবে মাত্র ৩৭টি। অথচ ১৮-২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা আছেন ২৪১ জন। অর্থাৎ উল্লিখিত পাঁচ স্তরে এ বছর পদ শূন্য হবে মাত্র ৭৪টি। আর পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা আছেন ৭৪০ জন। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিসিএস পুলিশের ১২তম থেকে ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য ৭৪০ জন কর্মকর্তার বিপরীতে ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃজন করার প্রস্তাব করে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ক্যাডারে ওপরের দিকের পদ একেবারে কম। এ জন্য অধিকাংশ কর্মকর্তা যোগ্যতা অর্জন করেও পদোন্নতি পান না। পদ সৃজন করে পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। তাই আমরা সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি চেয়েছি। পরে স্থায়ী পদ সৃজন করা হলে সমন্বয় করা যাবে।’