সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপির নেতৃত্বে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। গতি বাড়াতে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় বিএনপি। সেজন্য সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই জোরদার আন্দোলনে নামছে দলটি। এরই অংশ হিসাবে আগামীকাল বর্ণাঢ্য র্যালি করবে।
মূলত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ কর্মসূচি থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে মাঠ তৈরির কাজ শুরু করছেন নেতারা। ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে রাজধানীতে বড় ধরনের জমায়েতের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সাংগঠনিক জেলায়ও একই ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারবিরোধী সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবারও যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। এর আগে র্যালি ছাড়াও নানা ইস্যুতে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এর মধ্যে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আবারও বৈঠক করবে দলটি। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতাদের ভাবতে বলা হয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের শুরুতে গণমিছিল, আদালত চত্বরে অবস্থান, সমাবেশ, পদযাত্রার মতো কর্মসূচির প্রস্তাব রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, ‘সরকার পতনের একদফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি ও দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আছি; শান্তিপূর্ণভাবে আছি। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি বলে দেবে, আমরা কখন কী করব।’
নেতারা জানান, ‘২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচিতে প্রত্যাশিত ফল আসেনি, এটা হয়তো ঠিক। কিন্তু অর্জনও কম ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক মহল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করেছে। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব হলো, এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা-সমালোচনা যেন না হয়। আগামীতে আন্দোলন সফল করতে কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে বলেছে হাইকমান্ড।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ইতিহাস বলে জনগণের দাবি সফল হতে বাধ্য। আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। এখন আরেকটু ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে। সময়মতোই আমরা সেই ধাক্কা দেব। জনগণের বিজয় হবেই।’
নেতারা জানান, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে কর্মসূচি এবার ভিন্নভাবে পালনের নির্দেশনা রয়েছে। আন্দোলনের অংশ হিসাবে সব কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। এছাড়াও সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এবং কোনো উসকানিতে পা না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরের নেতারা জানান, রাজধানীতে র্যালি সফল করতে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা হচ্ছে। বিএনপি ছাড়াও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন পৃথকভাবে সভা করছেন। বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচিতে অংশ নেবে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। র্যালিতে কে কোন জায়গায় থাকবেন তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারাও এতে অংশ নেবেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি শুরু হবে। ফকিরাপুল, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় হয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটে গিয়ে শেষ হবে। ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বেলা ৩টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। এতে বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন তাদের স্ব স্ব সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে এতে অংশ নেবেন।
এদিকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সরকারবিরোধী সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ১৯ সংগঠন এ নিয়ে বৈঠকও করেছে। প্রাথমিকভাবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’সহ কয়েকটি নাম প্রস্তাব এসেছে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনগুলোর। সমমনা ছাত্র সংগঠনের বাইরে ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করছে ছাত্রদল।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশ ও জাতির বর্তমান সংকট নিরসনের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সেই লক্ষ্যে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ বা যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের চেষ্টা করব। প্রাথমিকভাবে ১৯ ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেছি। এতে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিয়াশীল অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনের বিষয়ে তারাও ঐকমত্যে আছেন। কিন্তু প্ল্যাটফরমটা ঐক্যবদ্ধভাবে নাকি যে যার জায়গা থেকে করবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। কিন্তু সবাই একমত ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য ছাত্র সংগঠনের দায় রয়েছে কাজ করার।’