২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডিজেল বা সিএনজিচালিত বাসগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এখন থেকেই বহরে বৈদ্যুতিক গাড়ি যুক্ত করতে হবে। না হলে হঠাৎ করেই বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে–‘বৈদ্যুতিক দ্বিতল এসি বাস সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবে এমনটাই বলেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। অথচ সেই বিআরটিসি-ই কিনছে ৩৪০টি সিএনজিচালিত এসি বাস। বাস কেনার প্রকল্পটি আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, বিআরটিসির জন্য এসব সিএনজিচালিত একতলা এসি বাস সংগ্রহে মোট ব্যয় হবে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে প্রায় সাড়ে সাত শ কোটি টাকা ঋণ দেবে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাসগুলো কেনা হবে, সঙ্গে থাকবে ১৫ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জাম। প্রতিটি বাসের পেছনে গড়ে খরচ হবে ৩ কোটি টাকা। ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন বড় শহরে চলাচল করবে এসব বাস।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বিআরটিসি দেশে বৈদ্যুতিক বাস আমদানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। ওই প্রকল্পের ঋণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বহরে নতুন বাস যোগ হচ্ছে না। তাই সিএনজিচালিত বাস আমদানি করা হচ্ছে।
বাসের দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, বাসের দাম প্রস্তাবের চেয়ে কমও হতে পারে। উন্মুক্ত দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে বাস কেনা হবে। বাসগুলো সাত বছর চললেই পুরো ঋণের খরচ উঠে যাবে।
দেশে গ্যাস-সংকট এখন চরমে। শিল্পের চাহিদা মেটাতে বেশি দামে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে সরকারকে। জ্বালানি সংকটে বিশ্বব্যাপী গ্যাসচালিত পরিবহন কমতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও ৩৪০টি সিএনজিচালিত এসি বাস কেনার উদ্যোগ কেন—এমন প্রশ্নে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বলেন, বাসগুলোতে বেশি গ্যাসের প্রয়োজন হবে না। ঢাকার যে সিএনজি স্টেশন আছে, তাতেই বাসগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস পাওয়া যাবে।
এখন এসব বাস কেনার পেছনে যুক্তি দেখিয়ে বিআরটিসি বলছে, ঢাকার ‘নগর পরিবহন’ ব্যবস্থায় বিআরটিসির কিছু নন-এসি বাস চলছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার প্রচণ্ড গরমে নন-এসি বাসগুলো কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাচ্ছে না। এসি বাসের স্বল্পতায় এসি প্রাইভেট কার বাড়ছে, যা যানজট ও বায়ুদূষণ বাড়াচ্ছে। তাই আরামদায়ক গণপরিবহনের নিশ্চয়তায় বিআরটিসির জন্য এসি বাস কেনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, একনেকে আসার আগে প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শক ব্যয়সহ বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তিও তোলা হয়েছিল। এ ছাড়া সভায় ঋণের শর্তাবলি, বিআরটিসি বহরে কতগুলো বাস সচল ও কতগুলো অচল, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। নতুন বাসের যে ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে, তার ভিত্তি জানতে চাওয়া হয়।