জনগণের প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ এবার আর ২০১৪ ও ১৮ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এবার আর আওয়ামী লীগ ওয়াকওভার পাবে না।’
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে তারেক রহমানের ১৬তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায়ই বলে, বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত তোমরা করছ। এ দেশের মানুষের সব অধিকার তোমরা কেড়ে নিয়েছ। আবার একটা ভোটের দিকে যেতে চাও, আবার আগের মতোই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তোমরা ট্রফি নিয়ে চলে যাবে। এ দেশের মানুষ এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা আর সম্ভব হবে না। এবার আর আওয়ামী লীগ ওয়াকওভার পাবে না। এ দেশের মানুষ এবার রুখে দাঁড়াবে।’
বর্তমান সরকার জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সরকার জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের একমাত্র লক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্জনগুলো কেড়ে নেওয়া। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের পদত্যাগ চাই বলার পর উনি জোরেশোরে বললেন, কেন পদত্যাগ করতে হবে? আমার কি অপরাধ? আপনার অনেক অপরাধ। একটা অপরাধ জোরেশোরে বলতে চাই, আপনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আত্মাকে হত্যা করেছেন।’
আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না—উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক এগারো তো একটা ঘটনা। তারও আগে থেকে, সেই ৭২ সাল থেকেই তারা পরিকল্পনা করেছে গণতন্ত্রকে এখানে তারা বাঁচতে দেবে না। সে জন্যই একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল করেছিল। এটা আমরা ভুলে যাইনি। এটা আওয়ামী লীগের চরিত্র।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি আজকে অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি এত অসুস্থ যে ডাক্তাররা বলছে, এখন বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ছাড়া তাকে আর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ এই সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সরকার একটা লক্ষ্য নিয়েছে। যারাই পরিবর্তনের জন্য কথা বলবে, যারাই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করে তাদের জেলে পুরে রাজনীতি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু ইতিহাস বলে মামলা-হামলা করে, জেলে পুরে কখনো মানুষের মুক্তি, গণতন্ত্রের আন্দোলন বন্ধ করে রাখা যায় না।’
ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যতগুলো সফল আন্দোলন হয়েছে, যা কিছু অর্জন আমাদের তাতে ছাত্রদের অবদান সবচেয়ে বেশি। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছিল ছাত্রদের নেতৃত্ব, ত্যাগের মধ্য দিয়ে।’
সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা অবৈধ উপার্জন করেছেন তারা এই সরকারকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু যারা এই সরকারকে সহায়তা করবেন তারা জনগণের কালো তালিকাভুক্ত হয়ে থাকবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের জেলখানায় বন্দী করে নির্বাচন করে শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাচ্ছে। আগামী ৩ মাসে হয়তো আমাদের আরও তিন লক্ষ লোককে জেলে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু তাতেও নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না।
উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুল রহমান খোকন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।