১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৮:২৯:২৩ অপরাহ্ন
মশার অভয়ারণ্য ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ড
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৯-২০২৩
মশার অভয়ারণ্য ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ড

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আট দিন ধরে অসুস্থ ঢাকার দক্ষিণখানের জামতলা মুন্সিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম। কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকের নির্দেশনায় বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।


আসমা বেগম যে বাড়িতে থাকেন, সেটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। পুরো এলাকায় মশার উৎপাত বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরে-বাইরে কোথাও মশা থেকে নিস্তার নাই। সিটি করপোরেশন কী ওষুধ ছিটায় জানি না, মশা তো মরে না।’ ডিএনসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে মোল্লাবাড়ি পানির পাম্প এলাকাটি। ওই এলাকার বাসিন্দা সেলিম জানান, দুই সপ্তাহ ধরে তাঁর জ্বর ও সর্দি-কাশি। ভয়ে এখনো ডেঙ্গু পরীক্ষা করাননি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন কোনোরকম ওষুধ ছিটিয়ে যায়। এটা অনেকটা লোক দেখানো। ওষুধে কোনো কাজ করে না।


শুধু এই দুই এলাকা নয়, ডিএনসিসিতে যুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সবখানেই মশার উৎপাত। এসব এলাকার রাস্তা, নর্দমা, খালি জায়গায় মাসের পর মাস পানি জমে থাকে। এই পানিই হয়ে উঠছে এডিস মশার প্রজননস্থল।


গতকাল সরেজমিনে ডিএনসির নতুন ওয়ার্ডগুলোর কয়েকটিতে মশার উৎপাত ও ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা বশির আহমেদের সঙ্গে কথা হয় হাঁটুপানি জমে থাকা দক্ষিণখান গণকবরস্থান রোডে। সেখানে ‘মুক্তিযোদ্ধা ভ্যারাইটিস স্টোর’ নামক একটি দোকান রয়েছে তাঁর। বশির আহমেদ বলেন, ‘সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় দোকানে বসে থাকা দায়। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের পরিবারের দুই সদস্য এখন অসুস্থ।’


২০১৬ সালের জুনে ঢাকার আটটি ইউনিয়নকে উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সাবেক এই ইউনিয়নগুলো বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর। আটটি ইউনিয়নকে ভাগ করা হয় ১৮টি ওয়ার্ডে। নতুন এই ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে সরকার ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন করলেও অর্থ ছাড় না করায় সেই উন্নয়নকাজ থমকে আছে। ফলে সেখানে ভাঙা সড়কে পানি জমে মশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা।


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘এডিস মশার প্রজননস্থলে জমে থাকা পানি যদি দীর্ঘদিন থাকে, তাহলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমানো যাবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে হবে। একই সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে কার্যকর ওষুধ ছিটাতে হবে। আমরা দেখছি সিটি করপোরেশন বিক্ষিপ্তভাবে ওষুধ ছিটায়, কিন্তু মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কার্যকর কোনো প্রচেষ্টা নেই।’


এ বিষয়ে ডিএনসিসির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া বলেন, ‘মাইকিং করেছি। মশার ওষুধ দিয়েছি। সবাই সচেতন হলে মশা কমানো সম্ভব হবে। এখন মশা কিছুটা কমেছে, তবে ডেঙ্গু কমেনি। যদি ফুলের টব, ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখি, তাহলে এডিস মশা থাকবে না।’


সম্প্রতি মশা মারার জন্য আমদানি করা জৈব কীটনাশক বিটিআই জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর ডিএনসিসির মশকনিধন কার্যক্রম কিছুটা থমকে গেছে বলে মনে করেন সিটি করপোরেশনের এক কীটতত্ত্ববিদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিটিআই জালিয়াতি প্রকাশিত হওয়ার পর উত্তর সিটির মশকনিধন কার্যক্রম কিছুটা কমে এসেছে। এতে মশা বেড়েছে, বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীও।


জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিচু এলাকা হওয়ায় কিছু নতুন ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা রয়েছে। তবে আমরা মানুষের দুর্ভোগ কমাতে কাজ করছি।’


শেয়ার করুন