১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৫:২৪:৫৭ অপরাহ্ন
সেবা সক্ষমতা বেড়েছে ফায়ার সার্ভিসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৯-২০২৩
সেবা সক্ষমতা বেড়েছে ফায়ার সার্ভিসের

নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা ও নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বর্তমান সরকারের নানামুখী কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংস্থাটি পরিণত হয়েছে বিপদগ্রস্ত মানুষের আস্থার প্রতিষ্ঠানে। আধুনিক সরঞ্জাম ক্রয়, জনবল বৃদ্ধি, উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রতিটি উপজেলায় ন্যূনতম একটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণে বেড়েছে সেবা সক্ষমতা। আজীবন রেশনসহ নানা সুবিধা প্রাপ্তিতে কর্মীরা হয়েছেন আরও উদ্যমী ও একান্ত কর্মনিষ্ঠ। সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে ফায়ার সার্ভিস। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে বিশ্বমানে উন্নীত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।


ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশে ফায়ার স্টেশন ছিল ২০৪টি। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৪৯৫। শিগগির আরও ৪০টি স্টেশন চালু করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম বন্দর ও শিল্প নগরী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কাজ চলছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের গ্যাপ এরিয়া ও দুর্গম এলাকা চিহ্নিত করে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা হবে ৭৩৫টি। একই সঙ্গে স্টেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২২টি সদর ফায়ার স্টেশনকে ‘বি’ শ্রেণি থেকে ‘এ’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। আধুনিক ফায়ার স্টেশনের জনবল ৫৬ জন এবং স্থল-কাম নদী ফায়ার স্টেশনের জনবল হবে ৪১ জন। এক একর জমির ওপর স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ভবনগুলো ভিত্তিসহ ৫তলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অধিদপ্তর।


অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে সংস্থাটির জনবল ছিল ৬ হাজার ১৭৫ জন। বর্তমানে আছেন ১৪ হাজার ৪৬৮ জন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জনবল ৩০ হাজার করার কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি আধুনিক গাড়ি ও উদ্ধার সরঞ্জাম যুক্ত করে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার লেডার সংবলিত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের গাড়ি যুক্ত হয়েছে যান্ত্রিক বহরে। সুউচ্চ ভবনের আগুন নেভানো এবং উদ্ধারকাজ সহজতর করতে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) নামে এই গাড়িটি দিয়ে ৬৮ মিটার উচ্চতা অর্থাৎ বহুতল ভবনের ২৪তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করা যাবে। অগ্নিনির্বাপণ কাজকে সহজ ও ফায়ারফাইটারদের জীবনহানি কমাতে কেনা হয়েছে রিমোর্ট কন্ট্রোল ফায়ারফাইটিং গাড়ি ও ড্রোন। এভাবে বিশ্বমানের একটি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।


ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান মহাপরিচালক ফায়ার সার্ভিসে যোগদানের পর থেকে উন্নয়নের এই ধারা ক্রমেই বেগবান হয়েছে। তার সময়ে জনসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের বেসামরিক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আত্মাহুতি দেওয়া ১৩ ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। এই সময়েই প্রথমবারের মতো ফায়ারফাইটাররা তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।


এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়ক শক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ৬২ হাজার আরবান ভলান্টিয়ার তৈরির কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে ৫৪ হাজার ৫২০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক তৈরি হয়েছে। তাদের জন্য উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। বস্তির আগুন নির্বাপণের জন্য বস্তিবাসীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ৯০০ স্বেচ্ছাসেবক। এ ছাড়া ফায়ার সেফটি ম্যানেজার কোর্স, ফায়ার সায়েন্স অ্যান্ড অকুপেশনাল সেফটি কোর্স, পিজিডি কোর্স পরিচালনা করে ২০১৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৩ হাজার ২৭২ জন ফায়ার প্রফেশনাল তৈরি করা হয়েছে। জনগণকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০২২ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৩৪৮টি প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিজস্ব দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য ২০২২ সালে ৬ হাজার ১৬৫ ফায়ার কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। নৌ দুর্ঘটনায় ডুবুরি হিসেবে কাজ করার জন্য আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া হয়েছে ডুবুরি প্রশিক্ষণ। নেওয়া হয়েছে ডুবুরি সম্প্রসারণ প্রকল্প।


অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন কালবেলার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বলেন, বিশ্বমানের উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এই একাডেমি স্থাপন হলে সেখানে বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি হবে।


ফায়ার সার্ভিস আধুনিকায়নে কুইক রেসপন্স টিম হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের জন্য আরও ৩৫৭টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৯২টি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ ছাড়া সেবা সহজে গ্রহণে ১৬১৬৩ নম্বরের হটলাইন চালু করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ও অনলাইনে লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন, এনওসি গ্রহণের সেবা কার্যক্রম, যা সেবা গ্রহণকে করেছে সহজতর।


মহাপরিচালক জানান, ফায়ার সার্ভিসের সাফল্যের এই ধারায় সবশেষ সংযুক্ত হয়েছে কর্মীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজীবন রেশন সুবিধা। ১ জুলাই ২০২৩ বা তারপর অবসরে যাওয়া সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই সুবিধা পাবেন। গত ১৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।


এতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিলে মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করে। রেশন হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রতি মাসে ২০ কেজি চাল (সিদ্ধ/আতপ), ২০ কেজি আটা, ২ কেজি চিনি, সাড়ে ৪ লিটার ভোজ্যতেল ও ২ কেজি ডাল পাবেন।


পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সেবা কাজেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সেবা নেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ফায়ার রিপোর্ট প্রত্যাশীদের সুবিধার্থে কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করে দেওয়া হচ্ছে। কমিটি তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার বিস্তারিত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফায়ার রিপোর্ট প্রত্যাশীদের তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ফায়ার সেফটি প্ল্যান প্রদান করা হচ্ছে পরিচালক (অপা. ও মেইন.)-এর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে। সেবাপ্রত্যাশীরা এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এসব কাজে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানগুলো সেবাপ্রত্যাশীদের কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে ২০ কোটি টাকার অনুদান প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন।


উল্লেখ্য, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী ফায়ার সার্ভিস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে ২০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছিলেন।


শেয়ার করুন