নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকের বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) লিয়াজো ও প্রটোকল অফিসার এবং ভিসির পিএস মো. ইসমাঈল হোসেনের সার্টিফিকেট জাতির ঘটনা প্রকাশের পর তাকে সাময়িক বরখান্ত করা হয়েছে। গত ৮ আগস্ট রামেবির ১৩ তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই সাথে বিষয়টি তদন্তের জন্য এক মাসের সময় দিয়ে রামেবির সিন্ডিকেট সদস্যকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমটি গঠন করা হয়। তবে মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি ওই কমিটি। এদিকে রেজিস্টার দপ্তরে সংরক্ষিত ইসমাইল হোসেনের ব্যাক্তিগত ফাইলে থাকা জীবন বৃত্তান্ত বদলে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তদন্ত কমিটির তিনজন সদস্য হলেন, রামেবির সিন্ডিকেট সদস্য এবং ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, সিন্ডিকেট সদস্য মল্লিকা খাতুন এবং রামেবির ডিন ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. নওশাদ আলী।
রামেবির একটি সূত্রের দেওয়া তথ্য মতে, সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে তদন্তকে ইসমাইল হোসেনের পক্ষে নিতে এরই মধ্যে কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. নওশাদ আলীকে ডিন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি রামেবির রেজিস্টার দপ্তরে সংরক্ষিত ইসমাইল হোসেনের ব্যক্তিগত ফাইলে রাতারাতি নতুন সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়েছে, পরিবর্তন করা হয়েছে তার জীবন বৃত্তান্ত (সিভি)।
রামেবির ওই সূত্র আরও জানায়, ইসমাইল হোসেন ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকর যেসমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছে বলে দাবি করছেন, ওই সময়টাতে তিনি আসলে ডা. মাসুম হাবিবের ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে রাজশাহীতে তার প্রাইভেট চেম্বারে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ডা. মাসুম হাবিব রামেবিতে ভিসি হিসেবে যোগ দিলে, ইসমাইল হোসেন রামেবিতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে চাকরি পান এবং ৬ মাসের মাথায় তিনি লিয়াজো ও প্রটোকল অফিসার পদ বাগিয়ে নেন। প্রকৃত পক্ষে ডা. মাসুম হাবিবের ছত্রছায়ায় তিনি জাল সার্টিফেকেটর আশ্রয়ে রামেবিতে চাকরি বাগিয়ে নেন।
এদিকে রামেবির বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করা রেজিস্টারবৃন্দ জানান, ইসমাইল হোসেন রামেবির লিয়াজো ও প্রটোকল অফিসার পদে চাকরির জন্য তার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সার্টিফিকেট প্রদর্শন করেছিলেন। সেই সার্টিফিকের জাল প্রমাণিত হবার পর ইসমাইল হোসেন এখন হঠাৎ করে দাবি করছেন তিনি টাইমস ইউনির্ভাসিটির বিবিএর সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। এমনকি এরই মধ্যে রামেবির রেজিস্টার দপ্তরে সংরক্ষিত তার ব্যক্তিগত ফইলে টাইমস ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে রয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই জাল সার্টিফিকেটটিও।
অথচ গত ১ মে ইসমাঈল হোসেনের জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরির বিষয়ে ‘রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় : জাল সনদে ভিসির দাপুটে পিএস’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের বক্তব্যে তিনি ওই প্রতিবেদকেও টাইমস ইউনিভার্সির বিষয়ে কোন তথ্য জানান নাই। বরং তিনি ওই সময় পর্যন্ত দাবি করেছিলেন, তিনি স্টামফোর্ড থেকেই বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং তার স্টামফোর্ডের সেই সার্টিফিকেটি জাল নয়। তবে প্রতিবেদনে ইসমাইল হোসেনের দাবি করা স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটটি যে জাল তার প্রমাণ করা হয়েছে। যা বুঝতে পেরে ইসমাইল হোসেন একটি সার্টিফিকেট জোগার করে এখন দাবি করছেন তিনি টাইমস ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছেন।
রামেবির প্রতিষ্ঠাকালীন (সাবেক, ২০১৮ সাল) রেজিস্টার সালাউদ্দিন সিদ্দিক বলেন, ইসমাইল হোসেনের চাকরির শুরুতেই তার শিক্ষাগত সার্টিফিকেট নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। কারণ তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ (২০১৪-২০১৮ সাল) সম্পন্ন করেছেন উল্লেখ করে সার্টিফিকেট সাবমিট করেন। তবে তিনি ওই সময়কালে ডা. মাসুম হাবিবের ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে রাজশাহীতে তার প্রাইভেট চেম্বারে কাজ করতেন। পরবর্তিতে তিনি রামেবির ভিসি হিসেবে যোগ দিলে ইসমাইল হোসেন রামেবিতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে চাকরি পান এবং ৬ মাসের মাথায় তিনি লিয়াজো ও প্রটোকল অফিসার পদে নিয়োগ পান। এটা সবাই জানতেন। এর প্রেক্ষিতেই তার সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষটি সামনে আবে। তবে আমরা ওই সময় স্টামফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তার বাবা ও মায়ের নাম জানতে চাইনি; এটা আমাদের ভুল ছিল।
সাবেক এই রেজিস্টার আরও জানান, আমি দায়িত্বে থাকাকালীন ইসমাইল হোসেনের ব্যক্তিগত অফিস ফাইনে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটে টাইমস ইউনিভার্সিটির কোট সার্টিফিকেট ছিল না। এটা হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।
২০২১ সালে রামেবির সেকশন অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন সুভেন্দু দত্ত। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকের বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) লিয়াজো ও প্রটোকল অফিসার এবং ভিসির পিএস মো. ইসমাঈল হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিক নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় অফিস তার বিবিএ সার্টিফিকের সত্যত্যা নিয়ে স্টাফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়। অফিসের সকল চাকরিজীবিদের ফাইল রেজিস্টার অফিসে যাখন যে দায়িত্বে থেকেন তখন তার তত্বাবধানে থাকে। তবে আমি দায়িত্বে থাকা কালীন সময় পর্যন্ত ইসমাইল হোসেনের ব্যাক্তিগত ফাইলে টাইমস ইউনিভার্সির কোন সার্টিফিকেট ছিল না। যদি তা থাকতো তবে সেই সার্টিফিকের বিষয়টিও যাচাই বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হতো।
রামেবির সাবেক রেজিস্টার (২০২১ সাল) ড. মো. খালেদ বলেন, আমি দায়িত্ব থাকা কালীন সময়ে ইসমাইল হোসেনের সার্টিফিকেট নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ আসে। এর পর আমরা স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তার সার্টিফিকে দেওয়া রোল নম্বর ও নাম উল্লেখ করে এর সত্যতা যাইয়ের জন্য চিঠি পাঠাই। এর উত্তরে স্টামফোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায় ওই রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে নামের ব্যক্তি তাদের শিক্ষার্থী।