রাজধানী ঢাকায় শিশুদের জন্য একমাত্র সরকারি বিনোদনকেন্দ্র শাহবাগের শিশুপার্ক। কিন্তু উন্নয়নকাজের জন্য প্রায় পৌনে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ পার্কটি। ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই নতুন আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। নতুন প্রকল্প শেষ হতে লাগতে পারে আরও পাঁচ বছর। ফলে আরও পাঁচ বছর বন্ধ থাকতে পারে শিশুদের এই বিনোদনকেন্দ্রের দুয়ার।
শাহবাগের শিশুপার্কটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রও পার্কটি খুলে দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি।
১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল শাহবাগের শিশুপার্কটির। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানঘেঁষা পার্কটি ঢাকার প্রথম ও একমাত্র সরকারি শিশুপার্ক।
শুরু থেকেই এটি ছিল জমজমাট। সব বিত্তের পরিবারের শিশুদের বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। পরে বেসরকারি উদ্যোগে অত্যাধুনিক রাইডসমৃদ্ধ আরও বিনোদনকেন্দ্র হলেও খরচ কম থাকায় এই পার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেনি। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকত। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থী লাখ ছাড়িয়ে যেত।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, শাহবাগের শিশুপার্ক উন্নয়নের জন্য ২০১৯ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিশুপার্কের জায়গায় ২০১৯ সালের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। পার্কটি ডিএসসিসি পরিচালনা করলেও ভূগর্ভস্থ ৬০০ গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অংশ হিসেবে। নথিপত্রে এই কাজ ২০২৪ সালের শেষ দিকে সম্পন্ন হবে বলা হলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নতুন নকশা অনুযায়ী শিশুপার্ক আগের মতো থাকছে না। যেখানে টিকিট কাউন্টার ছিল এর বরাবর একটি রাস্তা হবে। রাস্তার দুটি পথ দিয়ে যানবাহন বেসমেন্টে ঢুকবে। আগের কাউন্টারের স্থান থেকে রাস্তাটি সোজা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে। রাস্তার দুই পাশে থাকবে পানির ফোয়ারা। টিকিট কাউন্টার হবে উদ্যানের ভেতরে পূর্ব পাশে। দর্শনার্থীরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশ দিয়ে উদ্যানে ঢুকে কিছুটা পশ্চিম দিকে হেঁটে শিশুপার্কের কাউন্টারে যাবেন।
ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শিশুপার্কে আধুনিক রাইড বসানোর জন্য ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডিএসসিসির বোর্ড সভায় ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার এই প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। যেখানে প্রকল্পের শুরু ২০২৩ সালের জুলাই এবং ২০২৬ সালের জুনে সমাপ্ত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রকল্পটি শেষ করতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগতে পারে। সেই হিসাবে ২০২৮ সালে কাজ শেষ হতে পারে। কাজ শেষে খুলবে পার্ক।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিসুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিনোদনসেবা বাড়ানোর মাধ্যমে শিশু-কিশোরসহ জনগণের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব রাইড সংযোজন করতে নেওয়া প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। দরপত্র আহ্বান করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। কাজ শেষে কবে নাগাদ শিশুপার্ক উন্মুক্ত হবে–এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, শিশুপার্ক আধুনিকায়নে মোট ১৫টি অত্যাধুনিক রাইড যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে সুপার এয়ার রেস, টি কাপ ৯, ফ্লাইং ক্যাসেল, মিনি কোস্টার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইক, সুপার হ্যাপি সুইং, মেরি-গো-রাউন্ড ও ওয়াটার মেনিয়া থাকছে।