পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে মোংলা বন্দরে গতিশীল আমদানি-রপ্তানি কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। রাজধানীর সব থেকে কাছের বন্দর হওয়ায় মোংলা হয়ে পোশাকশিল্পের চালান যাচ্ছে ইউরোপে। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে গাড়ি আমদানি। বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠেছে শিল্প-কারখানা।
একই সঙ্গে বন্দরকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চালু হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেললাইন।
এ ছাড়া নগরীর জলাবদ্ধতার নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন- একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে খুলনা অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বদলে যাবে দৃশ্যপট।
মোংলা বন্দরের উন্নয়ন : আমদানি-রপ্তানির চাপ সামলাতে বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরে ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বারে জয়মণি ঘোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ৬০১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট’ প্রকল্পে জেটিতে কনটেইনার টার্মিনাল, হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড, ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ, সার্ভিস ভ্যাসেল জেটি শেড, ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ড, হারবার ক্রাফট কেনা হচ্ছে।
খুলনা-মোংলা রেললাইন : ৪২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এই বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত, নেপাল ভুটানের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে।
আমদানিকারকরা বলছেন বন্দরের সঙ্গে রেলসংযোগ না থাকায় পণ্য পরিবহনে ভোগান্তিতে এতদিন বড় মালবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। এ অবস্থায় মোংলা বন্দরকে রেলসেবার আওতায় আনা হচ্ছে। যা আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত : ৬০৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসহ নতুন-পুরনো রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, করোনা সংকট ও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখনো নগরীতে ২৫০-৩০০ রাস্তা ড্রেন খাল সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। শহরের উন্নয়নে সবাই যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করতে হবে।
সুপেয় পানি সরবরাহ : ২৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প চালু করেছে খুলনা ওয়াসা। প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটের মোল্লাহাটের মধুমতী নদী থেকে পানি আনা হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। এখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে নগরবাসীকে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প : ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী। খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বলেন, এ অঞ্চলের উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছে। ২৪টি এলপিজি ফ্যাক্টরি হয়েছে মোংলায়। ইপিজেড তৈরি হয়েছে। খুলনা-মোংলা ছয় লেনের কাজ চলছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থনীতির দরজা খুলছে।