নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে দিশেহারা মানুষ। প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যই ধরাছোঁয়ার বাইরে। সর্বত্র অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা উঠে এলেও নির্বিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কোনো সুফল দিচ্ছে না। সুদের হার বাড়িয়ে আর ব্যাংক থেকে সরকারের ধারের কারণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমে যাওয়ার কৌশল নেওয়া হলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ঋণ ব্যয়বহুল করা হয়েছে, বিনিয়োগে অর্থপ্রবাহ কমছে। মানুষের নগদ টাকা ব্যাংকেও ঢুকছে। কাজের কাজ হচ্ছে না।
মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া ছুটছেই। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কোনো পণ্যই বিক্রি হচ্ছে না। তথ্য-উপাত্ত, বাজার পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকটা অরাজক অবস্থা চলছে বাজারে।
গতকাল কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল, ডাল, ডিম, আদা, রসুন, মাছ ও মাংসের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি শাকসবজিতেও হাত দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৯০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা ১৬০ টাকা দরে এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়। প্রতি হালি (৪ পিস) ডিম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। আবার আলুর কেজি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহে আগে ছিল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা। আর সরকারের বেঁধে দেওয়া দর ৩৬ টাকা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতিটি পণ্যের দাম অসহনীয়ভাবে বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে ক্রেতার আয় বাড়ছে না। আয় না বাড়ায় ক্রেতার বাড়তি দরে পণ্য কেনা এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম ঠিক করে দেয়। এর কোনোটিই বাজারে কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকগুলোর জন্য অর্থ ধার নেওয়ার নীতি সুদহার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করেছে। আর নীতি সুদহার ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে, যা এক দশকে সর্বোচ্চ। এতে ব্যাংকে এখন আগের থেকে বেশি টাকা ঢুকছে। এতে মানুষের হাতে টাকা কমছে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) বৃদ্ধি করেছে। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি তেমন একটা না-ও কমতে পারে। কারণ, গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার স্মার্ট রেটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, কাঠামোগতভাবে ফিক্সড বলা যায়।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সাইমা হক বিদিশা বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতি পরিবর্তন ছাড়াও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমান মুদ্রানীতি কাজ করছে না।