১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৬:৪২:০৭ অপরাহ্ন
বিএনপির শীর্ষ নেতারা পুলিশের নজরদারিতে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
বিএনপির শীর্ষ নেতারা পুলিশের নজরদারিতে

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। জোরালো হচ্ছে পুলিশের তল্লাশি অভিযান। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতাকে এরই মধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। 


তবে এই মুহূর্তে তাদের গ্রেফতারের পরিকল্পনা নেই। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা ওয়ারেন্ট আছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এজাহারভুক্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ে সে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামের প্রতি পুলিশ থাকবে জিরো টলারেন্স অবস্থায়। তারা ২৮ অক্টোবর পৃথক সমাবেশ করতে চাইলেও পুলিশ তা দেবে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৩ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিএনপির প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময়ে মামলা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪০০। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। গ্রেফতার করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মীকে। 


জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, গত ৩ মাসে বিএনপির কত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই তথ্য আমার কাছে নেই। কারণ, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই না। যারা আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটায় তাদের বিরুদ্ধে সব সময় আমাদের অভিযান চলে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটনার শঙ্কা থাকলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমার ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। ২৮ অক্টোবর ঘিরে যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা চালায়, যদি নগরবাসীর নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দেয় তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনব। 


মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তার অফিস কক্ষে যুগান্তরকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু তাদের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তারা একটি স্বাধীনতাবিরোধী দল। হাইকোর্ট তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। নির্বাচন কমিশন তা কার্যকর করেছে। 


যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশকে হত্যা করেছে। তাই জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি অনুমতি ছাড়াই তারা সমাবেশের চেষ্টা চালায় তবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 


ডিএমপির উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের অসংখ্য নেতাকর্মী জঙ্গিবাদে জড়িত। সামনের দিনগুলোতে তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বাড়তে পারে। জামায়াতের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং মামলা আছে তাদের ধরতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। 


এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে। অতীতেও একাধিকবার অনুমতি চেয়েছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এবারও বিএনপির আবেদনটি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে বিবেচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। 


বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিএনপিকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলে নিশ্চয়ই কিছু শর্ত থাকবে। ওইসব শর্ত প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। 


কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হবে। ঢাকার প্রবেশপথসহ রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। হোটেল-মোটেলে রেইড দেওয়া হবে। টহল জোরদার করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপির আট অপরাধ বিভাগের ডিসি এবং ৫০টি থানার ওসিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 


ডিবি পুলিশকে অধিকতর তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। ওসিদের বলা হয়েছে, তার থানা এলাকায় যত এফআইআর এবং ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আছে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে। যারা বিশৃঙ্খলা করতে পারে বা যাদের কারণে নগরবাসীর জানমাল হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। 


২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো নাশকতার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে কোনো থ্রেট নেই। তবে নাশকতার আশঙ্কাকে আমরা কখনো উড়িয়ে দিই না। নাশকতার আশঙ্কাকে মাথায় রেখেই আমরা সব সময় নিরাপত্তা ছক প্রণয়ণ করে থাকি। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। 


সামনের দিনগুলোতে পুলিশ অমানবিক হবে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, করোনাকাল থেকে শুরু করে পুলিশ অনেক মানবিক কাজ করে সব মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাই পুলিশ অমানবিক হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমরা এই সামজের বাইরের কেউ নই। তাই সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের প্রতি আইনগত এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যারা অমানবিক কাজ করবে তাদের প্রতিহত করতে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 


এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার জানান, বাংলাদেশের কারাগারগুলো এখন ভয়াবহ নিপীড়ন-নির্যাতনের আয়নাঘর। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর রাখা হয় কারাগারের দম বন্ধ করা সেলে। 


দিন-রাত তাদের লকআপে রাখা হয়। ডাকাতি ও খুনের ভয়ংকর অপরাধীরা কারাভ্যন্তরে যে অধিকারটুকু ভোগ করে সেটুকুও বিএনপি নেতাকর্মীদের নেই। অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয় যেগুলো গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য। নিজের টাকা দিয়ে খাবার কেনার নিয়ম থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সেই অধিকারটুকুও দেওয়া হচ্ছে না। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল বিপজ্জনক জঙ্গি অপরাধীদের জন্য। সেখানেই বিএনপির নেতাকর্মী, ইউনিভার্সিটি, কলেজের ছাত্রদের গাদাগাদি করে রাখা হয়।


শেয়ার করুন