রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলা ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছে। এই দুই উপজেলা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে শতকরা ৬০ জন রোগী। মারাও গেছেন কয়েকজন। গত কয়েকদিনে এই উপজেলা থেকে মারা গেছেন গত এক সপ্তাহে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৬ জন। এদের মধ্যে চারজনের বাড়ি চারঘাট ও বাঘায়। বাকি দুজনের একজনের বাড়ি পুঠিয়ায় ও আরেকজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলায়।
গত ১৬ অক্টোবর চারঘাটে ২০ যায়গায় পরীক্ষা করা হয়েছে এডিস মশার লার্ভার। ১৫টি স্থানে পাওয়া গেছে ঘনত্ব। চারঘাট পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নে এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা করা হয়। জেলার মধ্যে এডিসের লার্ভার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে কীটত্ত্ববিদরা।
এডিশ মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বেড়ে যায়। সদর ইউনিয়নের মুংলি গ্রামে বিআইর পরিমাণ হলো ৮০।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত চারঘাটের রোগী ভর্তি ছিলেন ৮২ জন। আর বাঘার ছিলেন ৪৬ জন। তারা সবাই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে চারঘাটের মারা গেছেন নয়জন রোগী। বেশিরভারেই বাড়িই উপজেলার মুংলি গ্রামে। হাসপাতালে চারঘাটের রোগী মারা যায় ৮ জুলাই। এরপর থেকে রোগী বাড়তে থাকে। এছাড়া বাঘার মারা গেছেন পাঁচজন।
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা
জেলা কীটতত্ত্ববিদ তায়েজুল ইসলাম বলেন, গ্রামাঞ্চলে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব দেখে আমরা অবাক হয়েছি। মুংলি গ্রাম ও পৌরসভা সদরে জীবিত এডিস মশাও পাওয়া গেছে। পুরো উপজেলা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলাজুড়েই এ মশা ছড়িয়ে পড়েছে। কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এ পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এদিকে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত হলেও চারঘাট পৌরসভা সদরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ, সবজি বাজার, সরদহ বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ও পাত্রে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। উপজেলার এসব এলাকায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন মানুষ। তারা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পেতে ভোগান্তির কথাও জানিয়েছেন। অনেকে জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
মুংলি বাজার এলাকার ভ্যানচালক মকবুল আলী বলেন, বাড়ি ও এলাকার সবার জ্বর। এলাকায় যারই পরীক্ষা করা হচ্ছে, তারই ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। হাসপাতালে গেলে পরীক্ষা করতে অনেক খরচ। তাই জ্বরের ওষুধ কিনে খাচ্ছি আর আতঙ্কে দিন পার করছি।
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট আছে। তবে প্লাটিলেট মাপার ‘সেল কাউন্টার মেশিন’ হাসপাতালে নেই। এ জন্য রোগীদের বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।’
বাঘার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন কমে এসেছে। যাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে আমরা রামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমাদের এখান থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে।’
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, ‘জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু নিয়েও সচেতন হতে হবে। শীত আসতে আসতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে। দুই উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদেরসহ পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পরামর্শও দিচ্ছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফএমএ শামীম আহমেদ বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি রোগী চারঘাট ও বাঘার। এরপর পুঠিয়ার রোগী আছে। এছাড়া পবা, মোহনপুর, মহানগর ছাড়াও মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ নওগাঁর রোগী আছে। সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে চিকিৎসা দেওয়ার।’
তিনি জানান, রামেক হাসপাতালে বর্তমানে ২২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি আছেন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৭৫ জন। সুস্থ হয়ে হয়েছেন ৫৪ জন।
রামেক হাসপাতালে এবছর বছর চিকিৎসা নিয়েছে ৩ হাজার ৫০৪ জন। এদের মধ্যে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩২৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৫৩ জন। মারা গেছেন ২২ জন।