বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরে বিনিয়োগ নিয়ে আসার জন্য জার্মানির ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। বার্লিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল সোমবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : বাংলাদেশ-জার্মানি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩’ শীর্ষক রোডশো-এ অংশ নেওয়া বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলাম। বিএসইসি এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডার) যৌথভাবে এই আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসাইন, বেজার চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান হাসান মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বাবু, ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান প্রমুখ।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা (বাংলাদেশ) কখনই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হইনি। আগামীতেও আমরা আমাদের কোনো লক্ষ্যে ব্যর্থ হব না। আমাদের পরবর্তী টার্গেট নিজেদের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। জার্মানির ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে ১০০ স্পেশাল ইকোনমিক জোন আছে। মানি মার্কেটের মতো আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটও এগিয়ে যাচ্ছে। বিডা, বেপজাসহ সবাই আপনাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তাই বাংলাদেশে
বিনিয়োগ করে জার্মানি আমাদের উন্নয়ন সহযোগী হতে পারে।
জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ-জার্মানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে। এখন ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। এক্ষেত্রে জার্মানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। জার্মানি বাংলাদেশে রপ্তানি? বাড়াচ্ছে। আশা করি জার্মানির বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান হাসান মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বাবু বলেন, এই বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। কারণ বিদেশিরা বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। অনেক ক্ষেত্রে মিস গাইডেড হয়ে থাকে। গত এক দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, সেটা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে পারলেই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য সফল হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হওয়া দরকার, সেই পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে না। এই বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আমাদের দুইটা দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একটা হলো নতুন কোম্পানি আনতে হবে আর দ্বিতীয়ত বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত জায়গা। এখনই বিনিয়োগের সময়। আশা করি বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়বে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশে না গিয়েই জার্মানির বিনিয়োগকারী বারতুজ করোনাকালে বাংলাদেশের ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছেন। আশা করি ভবিষ্যতে জার্মানির বিনিয়োগ বাড়বে।
থ্রি আই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল বলেন, আশা করি এই সম্মেলনের মাধ্যমে ইউরোপে অবস্থানরত অনাবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী এবং ইউরোপের বিনিয়োগকারীরা এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি করবেন।