১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৪৭:১৯ অপরাহ্ন
প্র্রথমবারের মতো ট্রেন গেল পর্যটননগরী কক্সবাজারে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১১-২০২৩
প্র্রথমবারের মতো ট্রেন গেল পর্যটননগরী কক্সবাজারে

যুগ যুগান্তরের প্রত্যাশার অবসান ঘটল। অবশেষে প্রথমবারের মতো ট্রেন এলো দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলো। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যোগ হলো আরেক সাফল্য। রবিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয় পরিদর্শন ট্রেন। সঙ্গে নেওয়া হয় সংবাদকর্মীদের। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নির্মিত রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য নিরাপদ কিনা তা দেখার জন্যই এ পরিদর্শন। বিকেলে এ ট্রেন পৌঁছায় কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে। আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধন করবেন। এরপর সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হবে কক্সবাজারগামী ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচল।


সমুদ্র তীরের শহর কক্সবাজারে এর আগে কখনো খোলেনি রেলপথ। তাই প্রথম পরিদর্শন ট্রেন দেখতেই রেল লাইনের দু’পাশে মানুষের ভিড়। দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো এই পর্যটন শহর। আগামী ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিকভাবে সেদিনই রেল নেটওয়ার্কে নতুন করে যুক্ত হবে কক্সবাজার জেলা। ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচলের তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন এই লাইনে ট্রেন চালানোর একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথমবার কক্সবাজারের উদ্দেশে ট্রায়াল ট্রেন কক্সবাজার যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।


এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলমান রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে, যার ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। মেয়াদ বৃদ্ধি করে আগামী বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই সম্পন্ন হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে একের অধিক ট্রেন যুক্ত করা হবে।


রবিবার সকাল নয়টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে  রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ট্রেনে ছিলেন। তিনি জানান, কালুরঘাট সেতু সংস্কার করা হয়েছে। সেই সেতু অতিক্রম করেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেলরুট ধরেই পর্যটন নগরী কক্সবাজার স্পর্শ করল ট্রেন। তবে এটি ট্রায়াল রান না। নতুন নির্মিত রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য নিরাপদ কিনা তা দেখার জন্যই এ পরিদর্শন। এটি হলো আমাদের রুটিন কাজ। এ পরিদর্শনে ট্রেনযোগে আমাদের সঙ্গে রেলওয়ের প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তারা আছেন। ট্র্যাক, সিগন্যালসহ সকল অবকাঠামো যাচাই ও মূল্যায়ন করার জন্যই এ পরিদর্শন। আমাদের পরিদর্শন সফল হলো। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা।


রেললাইনের দু’পাশে উৎসুক মানুষ, আনন্দ উচ্ছ্বাস ॥ কক্সবাজার অভিমুখে জিআইবিআর বিশেষ ট্রেনটি যখন চকরিয়া স্টেশনে বিরতি দেওয়া হয়, তখন সেখানে শত শত মানুষের ভিড় দেখা যায়। লোহাগাড়া চুনতি এলাকায় হাতি পারাপারের ওভারপাস পরিদর্শন করেন কর্মকর্তারা। এর আগে সাতকানিয়া ও দোহাজারীতে দেখা যায় উৎসুক মানুষের ভিড়। তারা ট্রেনে থাকা কর্মকর্তাদের স্বাগত জানান। চট্টগ্রাম থেকে কালুরঘাট সেতু হয়ে ট্রেনটি যখন দোহাজারী স্টেশনে পৌঁছায় তখন এলাকাবাসী ও কর্মরত শ্রমিকরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলে স্বাগত জানান। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন দোহাজারী পৌঁছায় ১১টা ৫৫ মিনিটে।


কক্সবাজারে খুশির জোয়ার ॥ বহুল কাক্সিক্ষত স্বপ্নের ট্রেন এলো কক্সবাজারে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। ট্রেন দেখার জন্য উৎসুক জনতা আসেন ঝিনুক আকৃতির স্টেশনে। দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেলপথের সবকিছু ঠিক আছে কিনা সেটি যাচাই করতে পরিদর্শন ট্রেন এসেছে কক্সবাজারে। তবে হুইসেল শুনে ট্রেন দেখতে অনেকে দৌড়ে এসেছেন, উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে শিশু-কিশোরদেরও।


শেয়ার করুন