সংস্কারের এক বছর যেতে না যেতেই রাজশাহীর তানোর-চৌবাড়িয়া সড়কটির বিভিন্ন স্থান দেবে গেছে। ফাটল দেখা দিয়েছে সড়কের বিভিন্ন স্থানে। দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চালকদের সতর্ক করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর দেবে যাওয়া স্থানগুলোতে লাল নিশান টাঙিয়েছে। গত বছর ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ দশমিক ১৪ কিলোমিটার সড়কটি সংস্কার করা হয়।
সড়কটি নির্মাণকালে এলাকাবাসী কাজের নিম্নমান নিয়ে অভিযোগ করলে ঠিকাদার ও এলজিইডির কর্মকর্তারা সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ তুলে তাদের ভয় দেখিয়েছিলেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটি সংস্কারের সময়ও যেনতেনভাবে কাজ করা হয়। তারা প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী তা আমলে নেননি।
২০২০ সালে তানোর সদর থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত এ সড়কটি সংস্কারে টেন্ডার হয়। ১০ কোটি ৮৬ লাখ ব্যয়ের টেন্ডারটি পায় যশোরের দড়াটানার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মইনউদ্দিন লিমিটেড। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট। কিন্তু করোনা মহামারীর অজুহাতে বেশ কিছুদিন কাজ শুরু করেননি ঠিকাদার। এরই মধ্যে মেসার্স মইনউদ্দিন কাজটি নিজে না করে রাজশাহীর স্থানীয় ঠিকাদার ওয়াসিমের কাছে লাভে কাজটি বিক্রি করে দেয়। দ্বিতীয় ঠিকাদার ২০২২ সালের মাঝামাঝি কাজ শুরু করেন।
তানোর-চৌবাড়িয়া সড়কের ধানতৈড় এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগে বলেন, টেন্ডারের শর্তানুযায়ী পুরাতন রাবিশ অপসারণ করে নতুন খোয়া মিশ্রন দিয়ে রোলিং করার পর দ্বিতীয় স্তরে বালু ও খোয়া দেওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদার রাবিশ অপসারণ করে সেগুলো পুনরায় সড়কে বিছিয়ে সোজা কার্পেটিং করে দ্রুত কাজ শেষ করেন। সড়কটি সংস্কারের সময় ঠিকমতো রোলিংও করা হয়নি। এ কারণে সড়কটির অধিকাংশ স্থান দেবে গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, সড়কের মাদারীপুর বাজার পয়েন্টে বেশ কিছু ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গা ফেটে চৌচির হয়েছে। সড়কটির ধানতৈড় মোড়ের জসিম উদ্দিনের দোকানের সামনে ৫-৬ হাত স্থান দেবে গেছে। এ পয়েন্টে অনেক জায়গায় সড়কে ফাটল ধরেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে মোড়ের আগে-পিছে সতর্কীকরণ লাল নিশান টাঙানো হয়েছে। দরপত্র কার্যাদেশে সড়কের দুই পাশে ঘাস লাগানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার তা করেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টেন্ডার কিনে নিয়ে কাজ করলে মান কখনোই ভালো হওয়ার কথা নয়। এলজিইডির কর্মকর্তারা এসব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না। যে ঠিকাদার নিজে কাজ করবেন না তাকে দেওয়া উচিত নয়।
এলাকাবাসী জানান, এ সড়কে দিনে যানবাহন চালকরা সতর্ক হয়ে চলাচল করতে পারলেও রাতে তারা দুর্ঘটনায় পড়ছেন। এলাকাবাসী দেবে যাওয়া ও ফাটল হওয়া স্থানগুলো দ্রুত মেরামতের দাবি করেছেন। নাহলে ভারি যানবাহন চলাচলের ফলে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে তাদের আশঙ্কা।
নিম্নমানের কাজে অভিযোগ অস্বীকার করে সড়কটির দ্বিতীয় ঠিকাদার ওয়াসিম হোসেন বলেন, সড়ক তো সারাজীবন নতুন থাকবে না। নতুন বরাদ্দ এলে দেবে যাওয়া ও ফাটল হওয়া স্থানগুলো ঠিক করা হবে।
এলজিইডির তানোর উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির নষ্ট হওয়া জায়গাগুলো সংস্কার করা হবে। নিম্নমানের কাজের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
নওগাঁয় ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা মামলা দিয়ে আসামী পক্ষকে ফাঁসানোর অভিযোগে মাবিয়া বেগম (৪৮) নামে এক গৃহবধুকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার মাবিয়া বেগম আদালতে জামিন শুনানীর প্রার্থনা করলে আদালত উভয় পক্ষের শুনানী অন্তে জামিনের দরখাস্ত না-মঞ্জুর করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তিনি জেলার বদলগাছী উপজেলার চাপাডাল গ্রামের আসাদুল হাকিমের স্ত্রী।
মাবিয়া বেগমের পক্ষে জামিন শুনানী করেন এ্যাডভোকেট মামলা পরিচালনা করেন শুভ্র সাহা এবং রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন বিশেষ পি.পি এ্যাডভোকেট মোঃ মকবুল হোসেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর মাবিয়া বেগম একই গ্রামের তহিদুল তুহিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বাড়ির পূর্ব উত্তর কোনায় পাকা রাস্তার শুকনা ড্রেনের ভিতর ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ কর্তৃক তদন্ত শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না থাকায় প্রতিবেদন দাখিল করেন। ভিকটিম পুলিশ রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজী দরখাস্ত দাখিল করলে শুনানী অন্তে মঞ্জুর পূর্বক ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন।
ঘটনাটির সত্যতা রয়েছে মর্মে অনুসন্ধান পূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে আদালত তিন জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে চলতি বছরের ১০ আগস্ট আসামীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আনয়ন করা হয়েছে পর্যবেক্ষন দিয়ে সকল আসামীকে খালাস প্রদান করেন। আসামীরা শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে দাবী করে চলতি বছরের ১ আগস্ট ধর্ষিণের চেষ্টা দাবী করা নারী মাবিয়া বেগমসহ তিন জনের বিরুদ্ধে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ১৭ ধারায় অভিযোগ আনয়ন করেন।
আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার অভিযোগটি আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা উক্ত নারীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। আদালতে উপস্থিত হয়ে মাবিয়া বেগম জামিন শুনানীর প্রার্থনা করলে আদালত উভয় পক্ষের শুনানী অন্তে বিচারক জামিনের দরখাস্ত না-মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।