বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর কোচদের কেউ গেছেন ছুটিতে, কারও মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফিরে গেছেন নিজ দেশে। চোটে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলতে না পারা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে। সপ্তাহ দু-এক টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়দের আনাগোনা না থাকায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ছিল অনেকটা নিষ্প্রাণ।
তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে দুই টেস্টের সৌজন্যে পরিবেশটা আবারও প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠছে। প্রথম টেস্ট খেলতে গতকাল সিলেটে গেছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড দল। রাতের ফ্লাইটে সিলেট যাওয়ার আগে গতকাল দিনব্যাপী কোচিং স্টাফ-ক্রিকেটারদের পদচারণে মুখর ছিল বিসিবি কার্যালয় ও একাডেমি ভবন।
এর মধ্যে গতকাল মিরপুরে এলেন সাকিব। এলেন দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর থাকা খালেদ মাহমুদ সুজন। টিম ম্যানেজমেন্টের এত সদস্য দেখে আলোচনা ওঠে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যার রিপোর্ট দিতেই বিসিবিতে আসা তাঁদের। নিউজিল্যান্ড সিরিজের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে আজ থেকে। তার আগে রিপোর্ট জমা দিতে এলেন তাঁরা। সাকিব-হাথুরু একসঙ্গে কিছু সময় বসে কথাও বলেছেন।
তবে একটু পরই আলোচনার মোড় পরিবর্তন। সেটিও নতুন কোনো ইস্যু নয়—আরেকটি সিরিজে সাকিবকে নিয়ে ‘অনিশ্চয়তা’। বিশ্বকাপে তর্জনীর চোটে পড়ে কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে আগেই ছিটকে গেছেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু এবার নিউজিল্যান্ডে ফিরতি সিরিজে তাঁকে পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।
গতকাল সাকিব মূলত বিসিবির মেডিকেল বিভাগে চোটে পড়া আঙুল দেখাতেই এসেছিলেন। ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করা হয়েছে তাঁর। বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের চোটের ব্যাপারে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘সাকিব আজকে (গতকাল) এসেছিল ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করার জন্য। ওর আঙুলে একটা চিড় আছে। তিন সপ্তাহ ওই আঙুলে ব্যান্ডেজ থাকবে, বন্ধ থাকবে। ওর দুই সপ্তাহ হয়েছে, আরও এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। এরপর আমরা পরীক্ষা করব, এক্স-রে করব, দেখব আমরা। সেই রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী সিদ্ধান্ত, মাঠে ফেরা...।’
প্রত্যাশিতভাবে চোট থেকে সেরে না উঠলে নিউজিল্যান্ড সফরে সাকিবকে এমনিতেই পাওয়া যাবে না। মেডিকেল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই মাসের শেষ দিকেই বোঝা যাবে তাঁর চোটের অবস্থা। সাকিব ফিট থাকলেও নিউজিল্যান্ড সফরে তাঁকে পাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে গত পরশু তিনটি আসনের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তিনি। প্রার্থিতা পেলে ওই সিরিজে সাকিবকে পাওয়া যাবে না জানিয়েছে বিসিবির একটি সূত্র। বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু নির্বাচনী প্রচারণা।
আগামী ১০ ডিসেম্বর শেষে হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিরতি সিরিজে নিউজিল্যান্ডে যাবে বাংলাদেশ দল। খেলবে ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। ১৭ ডিসেম্বর ডানেডিনে শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ। পরের দুই ম্যাচ হবে ২০ ও ২৩ ডিসেম্বর। ২৭, ২৯ ও ৩১ ডিসেম্বর হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ম্যাচগুলো। অর্থাৎ নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে চলবে এই দুটি সিরিজ।
তাই চোটের চেয়ে নির্বাচনের কারণে সাকিবকে পাওয়া নিয়ে বেশি অনিশ্চয়তা। বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাকিব নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ছুটি নেবেন। এ ব্যাপারে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তাঁর।