পারুল। বয়স প্রায় ১৫ বছর। অজ্ঞাত কিশোরী। মাস পাঁচেক আগে পুঠিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর পর মুমূর্ষু অবস্থায় মেয়েটিকে নিয়ে আসা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মাথায় এবং শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত অজ্ঞাত মেয়েটিকে ভর্তি করা হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এর পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চলে যান। হাসপাতালের নিউরো সার্জারি (৮ নম্বর) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে পারুলের সেবা-শুশ্রুষা করার মতো কেউ ছিল না। পাশাপাশি মাথাসহ সারা শরীরের ভিন্ন অংশ ছিল খাম-জখমে ভর্তি। এর মধ্যে একটি পা ও একটি হাত ছিল ভাঙা। ফলে নড়া-চড়াও করতে পারছিল না মেয়েটি।
পরের দিন সকালে হাসপাতালে ডিউটি (দায়িত্ব পালন) করতে এসে অজ্ঞাত রোগীর খবর পান আয়া আলেয়া খাতুন। এরপর ছুটে যান ওই রোগীটির কাছে। তখনো মেয়েটির তেমন জ্ঞান ছিল না। নিজের নাম বলা তো দূরের কথা কোনো কথাও বলতে পারছিল না। এর পর সেই অজ্ঞাত মেয়েটিকে নিয়ে শুরু হয় আলেয়ার যুদ্ধ। হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের বারান্দায় রেখে মেয়েটিকে চিকিৎসা সেবা দিতে থাকেন চিকিৎসা ও নার্সরা। আর তাঁকে গোসল থেকে শুরু করে তিন বেলা খাওয়ানো এবং সেবা-যত্ন করতে থাকেন আয়া আলেয়া খাতুন।
প্রায় চার মাস মেয়েটিকে নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন আলেয়া। একপর্যায়ে কিছুটা সুস্থ হলেও জ্ঞান ফিরে মেয়েটির। তখন মেয়েটি জানায় তার নাম পারুল। ভাইয়ের নাম জাহাঙ্গীর। এর বেশিকিছু এখনো বলতে পারে না মেয়েটি। কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি পারুল। তার ভাঙা বাম পাটির অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে অপারেশন করে রড দিতে হয়েছে।