১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:২২:২৮ অপরাহ্ন
রাজশাহীর ৬টি আসনে ৫ স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জের মুখে ৫ নৌকার প্রার্থী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০১-২০২৪
রাজশাহীর ৬টি আসনে ৫ স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জের মুখে ৫ নৌকার প্রার্থী

আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে রাজশাহীর ৬টি আসনের প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে। তবে প্রচারণা শেষে ভোটের হিসাব নিকাশে ৬টি আসনের মধ্যে একটি আসন ছাড়া ৫টি আসনেই আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে নৌকার প্রার্থীরা। কারণ ৫টি আসনেই শুরু থেকেই শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠে ছিল নিজ দলেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।


মূলত নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘ সময় এলাকার বাইরে থাকার সুবাদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ গুছিয়ে নিয়েছিল আগেই। যার কারণে নৌকার প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেমে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে এসব আসনে আওয়ামী লীগেরই ভোট তিন থেকে চারভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। টানা প্রচারণা ও ভোটারদের সাথে কথা বলে এমনটাই উঠে এসেছে। তবে প্রবীণ রাজনীতিবিদরা বলছেন স্বতন্ত্র বা নৌকার যেই জয়ী হোক সেটি আওয়ামী লীগেরই জয় হবে বলে মনে করছেন।


রাজশাহী-১ আসন : রাজশাহী-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরি ছাড়াও একই দলের তিনজন প্রার্থী শক্ত অবস্থান নিয়ে আছে। বিশেষ করে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী (কাঁচি প্রতিক) আগে থেকেই মাঠ গুছিয়ে রেখেছিলেন। যার কারণে নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরি মাঠে নেমে অনেকটাই স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপের মুখে পড়তে হয়েছে।


এই আসনে আরো দুইজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন তারা হলেন, মাহিয়া মাহি (ট্রাক) আয়শা আক্তার ডালিয়া (বেলুন)। এই আসনে আওয়ামী লীগের ভোট চারভাগে বিভক্ত। তবে এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর। এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী যে মাঠ তৈরি করেছেন তাতে এ আসনে নৌকার বিজয় অনেকটাই অনিশ্চিত বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।


রাজশাহী-২ (সদর) : এ আসনে গত তিনবার নিজের প্রতিক বাদ দিয়ে নৌকায় উঠে নির্বাচন করেছেন ওয়ার্কার্সপার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। চতুর্থবারো তিনি নৌকা নিয়েই নির্বাচন করছেন। মূলত এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মাদ আরী কামালকে। পরে আসনটি জোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়। আসনটি জোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়ার পর আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা (কাঁচি) নির্বাচন করছেন।


তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র হওয়ার কারণে এমপি ফজলে হোসেন বাদশার কপাল পুড়তে চলেছে। পুরো মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থী বাদশার পক্ষে কাজ করেছেন। যার কারণে নৌকা পেলেও স্বস্তিতে ছিলেন না এমপি বাদশা। সেই জায়গায় থেকে এই আসনে নৌকার পরাজয় এবার নিশ্চিত বলে মনে করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও এ আসনটি স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের ঘরে যায়নি। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপর ভর করে আওয়ামী লীগ আসনটি তাদের ঘরে তুলতে চায়।


রাজশাহী-৩ আসন : এক মাত্রা রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন ভোটার ও রাজনৈতিক মহল। এ আসনে নৌকার প্রার্থী রয়েছেন আসাদুজ্জামান আসাদ। আসনটিতে নৌকার বিপক্ষে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এমনটি অন্য দলের যারা নির্বাচন করছেন তাদেরও অবস্থান ভাল নয়। যার কারণে এ আসনে নিশ্চিত নৌকার বিজয় হবে।


রাজশাহী-৪ আসন : এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আলোচিত সমালোচিত আসন হলো রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগরই দুই প্রার্থী শক্ত অবস্থান নিয়ে আছেন। নৌকা নিয়ে এ আসনে রয়েছেন আবুল কালাম আজাদ ও স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করছেন তিনবারের এমপি এনামুল হক (কাঁচি)। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে এই আসনে হামলা, মামলা, অগ্নিসংযোগ ছিল আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। এ আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের সমর্থকদের উপর প্রতিনিয়ত হামলা চালিয়ে গেছে। তাকে মাঠ থেকে বিদায় করার মিশন নিয়ে কালাম কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত এনামুল হক মাঠে শক্ত অবস্থানে নিয়ে ছিলেন। প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক নৌকার প্রার্থী কালামের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। সেই জায়গা থেকে এই আসনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোট হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল জয়ী হবে এমনটা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


রাজশাহী-৫ আসন: রাজশাহী-৫ (দুর্গাপুর-পুঠিয়া) আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশয়ী অবস্থা নৌকার। প্রচারণার শুরু থেকে নৌকার প্রার্থী সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা কর্মী সংকটে ভুগেছেন। এ আসনের দুই উপজেলার সিনিয়র-জুনিয়ার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানকে (ঈগল) সমর্থন করায় পুরো মাঠ দখলে ছিল তার। নৌকার সাথে মুষ্টিমেয় নেতাকর্মী সমর্থক ছাড়া সিনিয়র কোনো নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। সেই জায়গা থেকে এই আসনে এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাল্লাই ভারি। এখানে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভবনা দেখছে ভোটাররা।


রাজশাহী-৬ আসন: এ আসনটিতে নৌকার হাল ধরেছেন পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আছেন একই দলের সাবেক এমপি রাহেনুল হক রায়হান (কাঁচি)। তবে এমপি শাহরিয়ার আলম গত ১৫ বছর তার দপ্তর সামলাতে গিয়ে ঢাকায় থেকেছেন বেশি। যার কারণে এবার নির্বাচনে মাঠে নেমেই তিনি অনেকটা ভোটার ও দলীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রতিক বরাদ্দের পর থেকে তিনি মাঠে নামলেও দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গ দেননি। দুই উপজেলার হাতে গোনা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া তার সঙ্গে কেউ ছিলো না। একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়হানের দিকে গড়ে কাজ করেছেন দুই উপজেলার ডজনখানেক সিনিয়র নেতাকর্মী। যার কারণে এই আসনটি পররাষ্ট্রপতিমন্ত্রীর হাত ছাড়া হতে চলেছে। ভোটাররা বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসনটিও স্বতন্ত্রের দখলে যাবে। আর যদি ভোটাররা ভেদাভেদ ভুলে নৌকায় ভোট দেন তবেই নৌকা জয়ী হবে।


শেয়ার করুন