দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (এমএফএস) গ্রাহক সংখ্যা প্রথমবারের মতো ২২ কোটি ছাড়িয়েছে, যা দেশের বর্তমান জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। মূলত একই গ্রাহকের একাধিক অপারেটরে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে এসব গ্রাহকের অর্ধেকেরই বেশি নিষ্ক্রিয়।
সর্বশেষ নভেম্বর মাসে গ্রাহক বেড়েছে পৌনে ২৪ লাখ। তবে গ্রাহক বাড়লেও সার্বিক লেনদেন কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন সুবিধার কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। ফলে প্রতিদিনই এ সেবায় হাজার হাজার গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন।
সবশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। এই জনসংখ্যার সবার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমনটিও নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেকটি অপারেটরে জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১টি করে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ রয়েছে। আগে একটি এনআইডির বিপরীতে একই অপারেটরে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ ছিল।
প্রথম যখন এনআইডি দেওয়া হয়, তখন সেটি ছিল ১৩ ডিজিটের। পরে জন্মতারিখ ও সালসহ এনআইডি সংশোধন করা হয়। এরপর দেওয়া হয় স্মাট এনআইডি কার্ড। ফলে ব্যক্তি এক থাকলেও নম্বর আলাদা হয়ে গেছে। আবার অনেকের নামেরও পার্থক্য আছে। এ কারণে বর্তমানে একই অপারেটরে একজন ব্যক্তির একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, যে কোনো সেবায় অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে সাধারণ প্রবণতা হলো- প্রত্যেক গ্রাহক গড়ে ১.৫টি অ্যাকাউন্ট মেইনটেইন করে। অর্থাৎ দেশে যদি ১২ কোটি মানুষ থাকে, তাহলে ১৮ কোটি অ্যাকাউন্ট হবে। এর থেকে কমবেশিও হয়। মোবাইল ফোনের গ্রাহকের (সিম) ক্ষেত্রেও প্রতি গ্রাহকের বিপরীতে গড়ে ১.৫টি সিম রয়েছে। আর সিমের বিপরীতেই এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে থাকে।
২০১১ সালের মার্চে বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত আছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৮৬ হাজার জন। মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১ হাজার ৯৪৩ জন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অর্ধেকের বেশি অ্যাকাউন্টই নিষ্ক্রিয় আছে। গত নভেম্বর শেষে নিষ্ক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৮৮ হাজার। নিয়মানুযায়ী, কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোনো ধরনের লেনদেন না হলে তা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোনো অনিয়ম না পাওয়া গেলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ডসংখ্যক গ্রাহক বাড়লেও নভেম্বরে লেনদেন কমে গেছে। এ মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৯৬৫ কোটি টাকা কম।