ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে চায়। সেই লক্ষ্যে দলটির নীতিনির্ধারকরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের সুযোগের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। বিএনপি এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বাইরে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পান তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের এ সিদ্ধান্ত সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। এতে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ ছড়িয়ে পড়লেও নৌকা প্রতীকের সঙ্গে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনকে মডেল হিসাবে দেখছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার সঙ্গে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই আহ্বান করা হয়েছে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ সন্ধ্যায় এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, এ সভায় উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক থাকবে কিনা-সে সম্পর্কে তারা এখনো কিছু জানেন না। এবার নৌকা প্রতীকের সঙ্গে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ থাকছে কিনা তাও নিশ্চিত নন আওয়ামী লীগের এসব কেন্দ্রীয় নেতা। শাসক দলটির নেতারা রোববার যুগান্তরকে জানিয়েছেন, বিএনপি এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে আসবে কিনা-সেসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হবে এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর এপ্রিল নাগাদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক ধাপে পাঁচশর কাছাকাছি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে ইসি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য রোববার যুগান্তরকে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দুই ধরনের চিন্তাভাবনা করছেন তারা। একটি হচ্ছে-বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্ররা এলে আগের মতো উপজেলা পরিষদের এবারের নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে করা যেতে পারে। অপরটি হচ্ছে-বিএনপিসহ তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করলে নৌকার সঙ্গে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি বলে জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য। অবশ্য তার মতে একটি বিষয়ে তারা (আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা) একমত হয়েছেন যে, এই (উপজেলা পরিষদ) নির্বাচন উৎসবমুখর করা দরকার। কারণ বিএনপিসহ তার মিত্রদের বর্জনের মধ্যে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণে দেশবাসী যে নির্বাচন (সংসদ নির্বাচন) প্রত্যক্ষ করেছে, তা একটি মডেল নির্বাচন মনে করছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক রোববার যুগান্তরকে বলেন, আমরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণের ফলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধির আশঙ্কা করছি। তাই এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করে আরও কিছু দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। এই নেতার মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থায়ী রূপ লাভ করেছে দলীয় নেতাকর্মীদের বিবাদ। আওয়ামী লীগের ওই সাংগঠনিক সম্পাদক আরও জানান, সম্প্রতি তারা দলের (আওয়ামী লীগের) কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে সংঘাত ও সংঘর্ষ বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে আগের মতো নির্দলীয় হওয়া উচিত। এতে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে তৃণমূলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর। নির্বাচনও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।