১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:২৭:০১ পূর্বাহ্ন
ভালো খবর আসছে অর্থনীতিতে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৪
ভালো খবর আসছে অর্থনীতিতে

টানা কয়েক মাস ধরে প্রবাসী আয় বাড়ছে। একইভাবে বাড়ছে রফতানি আয়ও। পাশাপাশি কমে গেছে আমদানি ব্যয়। এতে সার্বিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমে গেছে। শুধু তাই নয়, চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্ত রয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সার্বিকভাবে আমদানি কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১৯২ কোটি মার্কিন ডলার। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়ও। পাঁচ মাস ধরে প্রবাসী আয় প্রায় ২০০ কোটি ডলার করে আসছে।


 


এমনকি ধারাবাহিক পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) সঙ্গে ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করার পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৭ মার্চের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার,  যা আগের দিন ৬ মার্চ ছিল ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।


 


প্রসঙ্গত, টাকা-ডলার অদলবদল বা সোয়াপ সুবিধা চালুর পর ১৫ দিনে ১০০ কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট রিজার্ভ বাড়লেও নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বাড়ছে না। কারণ, এই ডলার দায়হীন না। অদলবদলের সময় শেষ হলেই এসব ডলার আবার ফেরত দিতে হবে।


ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোয়াপ সুবিধায় উপকৃত হচ্ছে ব্যাংকগুলো। কারণ, ডলার জমা রেখে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর তহবিল খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ। ব্যাংকগুলো সেই টাকা সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদে সরকারের ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করতে পারছে। পাশাপাশি এই টাকায় ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারছে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কম খরচের তহবিল থেকে বেশি আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।


ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে মুদ্রার অদলবদল শুরু করে, যা রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চলমান মুদ্রার অদলবদল গ্রস রিজার্ভের ধারাবাহিক বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।


এর আগে, গত ৪ মার্চ রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।


অবশ্য সরকারি আমদানি দায় মেটাতে আগের মতোই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছিল, তাও এখন কিছুটা কমে এসেছে। ফলে ডলারের দাম না বেড়ে এখন কমছে। ব্যাংকগুলো আগে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনেছে ১২০ টাকার বেশি দামে, এখন এই দাম ১১৮-১১৯ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে আমদানিকারকরাও আগের চেয়ে কম দামে ডলার পাচ্ছেন।


এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোয়াপ বা অদলবদলের ফলে মোট রিজার্ভ বাড়ছে, এটা ভালো দিক। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক উভয়ই লাভবান হচ্ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ঋণের সুদহার বাড়ায় ডলারের সংকট কিছুটা কমেছে। তার ধারণা, সুদহার আরও কিছুটা বাড়লে সংকট আরও কমে আসবে।


এদিকে সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে প্রায় ৫১৯ কোটি ডলার—যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে গেলো ফেব্রুয়ারিতে রফতানি বেড়েছে ৫৬ কোটি ডলার। টাকার হিসাবে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অবশ্য, গত জানুয়ারিতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫৭২ কোটি  ৪৭ লাখ ডলারের রফতানি আয় এসেছে।


আর ফেব্রুয়ারিতে দেশে ২১৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা অতীতের যেকোনও ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।


রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে রফতানি বেশি হয়েছে গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১২ শূন্য ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের আর কোনও মাসে এত বেশি হারে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড নেই।  গত মাসে দেশে যখন রেকর্ড পরিমাণ রফতানি আয় আসে, তখনও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ


চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সার্বিক আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে ৩০৫ কোটি ডলারে নেমেছে। একই সময়ে রফতানি শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ২৫৯ কোটি ডলার হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৪৫৯ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২৩১ কোটি ডলার।


শেয়ার করুন