দেশের বাজারে ২০১৫ সালে প্রতি কেজি ফার্মের মুরগির মাংসের দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। কিন্তু একই বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য সেই মুরগির মাংস কেনা হয়েছে ৩০৫ টাকা দরে। প্রতি কেজি মুরগির মাংস কেনায় ১২০-১২৫ টাকা বেশি দিয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। আর শুধু মুরগির মাংস নয়, একইভাবে অন্যান্য পথ্য কেনার ক্ষেত্রেও এমন দুর্নীতি হয়েছে। এর আগে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মুরগির মাংস কেনা হয়েছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়, অথচ তখন দেশের বাজারে একই মুরগির মাংসের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৮৫-৯০ টাকা। সেই থেকে বেশি দামে কেনার প্রবণতা এখনো চলছে।
বর্তমানে বিএসএমএমইউতে প্রতি কেজি সাধারণ মানের মিনিকেট চাল কেনা হচ্ছে প্রায় ৭৫ টাকায়, অথচ একই মানের চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবার সর্বোচ্চ এ প্রতিষ্ঠানে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কেনা, টেন্ডার ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পথ্যসামগ্রী ক্রয় এবং নিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতার মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী কেনাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারের অডিট অধিদপ্তরের একাধিক নিরীক্ষায়ও এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এসব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতি বছর সরকারের বিপুল টাকা লোপাটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য পাঁচটি লটে ৭০ থেকে ৭৫ ধরনের পথ্যসামগ্রী কেনা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেফিরে মেসার্স চিত্রা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স রাহাত এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব পথ্যসামগ্রী সরবরাহ করছে। বর্তমানে চিত্রা এন্টারপ্রাইজ ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর লটের আর মেসার্স রাহাত এন্টারপ্রাইজ ৫ নম্বর লটের মসলাসামগ্রীসহ ১৮ সরবরাহ করছে।
হাসপাতালের তথ্য বলছে, ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল টেন্ডারে লট-১-এর আওতায় চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ ২৩ ধরনের রেশনদ্রব্য; লট-২-এর শাকসবজিসহ ২৫ ধরনের পণ্য; লট-৩-এ মাছ, মাংস, ডিমসহ ছয় ধরনের পণ্য এবং লট-৫-এর আওতায় সেমাই, সুজি ও মসলাসহ ২০ ধরনের পণ্য মিলিয়ে মিলিয়ে ৭২ ধরনের পণ্য সরবরাহের কাজ পায় মগবাজারের মেসার্স রাহাত এন্টারপ্রাইজ। আর লট-৪-এর আওতায় বিস্কুট, পাউরুটি, দুধ, ফলমূল জাতীয় পণ্য সরবরাহের কাজ পায় গুলশানের মেসার্স এসকো ট্রেডিং কোং।