১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:২৮:০৮ পূর্বাহ্ন
উন্মুক্ত হতে পারে কুয়েতের শ্রমবাজার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৪
উন্মুক্ত হতে পারে কুয়েতের শ্রমবাজার

কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আবার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মী নিয়োগে সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল কুয়েতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন নিয়ম ১ জুন থেকে কার্যকর হবে।


 


অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হলে কুয়েতের শ্রমবাজারে খুব সহজে অধিক কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে।


বিদেশে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (রিক্রুটিং এজেন্সি) সূত্রে জানা গেছে, কুয়েতের শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মী প্রেরণে এক ধরনের বিধি-নিষেধ দিয়ে রেখেছিল দেশটির সরকার। এই বিধি-নিষেধের মধ্যে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে কর্মী পাঠাত বাংলাদেশ, যা ছিল অধিক ব্যয়বহুল ও জটিল। এতে খুব অল্পসংখ্যক কর্মী কুয়েতে যেতে পারতেন।


তবে এই নিয়মের পরিবর্তন আনছে কুয়েত সরকার। গত ১৯ এপ্রিল কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যের বরাতে জানা যায়, কর্মিসংকট দূর করতে এবং কর্মী নিয়োগের খরচ কমাতে সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছে দেশটি। কুয়েতের শ্রম বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে আগের পদ্ধতিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১ জুন থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।


 


 


নতুন নিয়মে কর্মী পাঠানো বাড়বে


কুয়েতের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার শ্রমবাজারে প্রবাসী কর্মী নেওয়ার  প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, দেশটির যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে, তাদের প্রথমে কুয়েতে অবস্থানরত বেকার বিদেশি কর্মী থেকে নিয়োগ দিতে হবে। এরপর তাদের কর্মী চাহিদার একটি নির্দিষ্ট অংশে শুধু নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে পারবে। ১ জুন থেকে এই নিয়ম আর থাকছে না।


এ বিষয়ে দীর্ঘদিন কুয়েতে কর্মী পাঠানো আবুল ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, কুয়েতে সব সময় লামানার বিপরীতে কর্মী পাঠানো যায়। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে ওই দেশের মালিকপক্ষ কুয়েতের শ্রম মন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদন করে।


এর পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েতের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়, যাকে লামানা বলা হয়।


 


তিনি বলেন, ‘লামানা খুব ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের দেশ থেকে কর্মী যেতে অনেক খরচ হয়। অনেক সময় দেখা গেছে, এই নিয়মগুলো পালন করে যেতে যেতে চুক্তির মেয়াদ থাকে না।’


এই লামানার নিয়মটি ব্যয়বহুল বলে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলোও জানিয়েছে। তাদের প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, এই পদ্ধতির কারণে দেশটিতে শ্রমব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, ভোক্তা পর্যায়ে যার প্রভাব পড়েছে।


অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই লামানার নিয়মটা পরিবর্তন করে বাংলাদেশের জন্য কুয়েতের শ্রমবাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হলে এ দেশ থেকে কর্মী পাঠানো অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।


রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই শ্রমবাজারে আমাদের কর্মী যাচ্ছেন। কিন্তু ব্যয়টা খুবই বেশি হচ্ছে। এখন এটার পরিবর্তন হলে কর্মী পাঠানো অনেকটা সহজ হবে এবং খরচ অনেক কমে যাবে। এতে কর্মীর সংখ্যাও বাড়বে।’


 


শ্রমবাজারের চিত্র


বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ছয় লাখ ৯৬ হাজার ৮৮৯ জন বাংলাদেশি কর্মী কুয়েতে গেছেন। এর মধ্যে ১৯৭৬ থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪০ বছরে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ৪৭ জন বাংলাদেশি গেছেন। ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত আট বছরে গেছেন এক লাখ ৯১ হাজার ৮৪২ জন।


জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, ২০০৫ সালে ৪৭ হাজার এবং ২০১৭ সালে ৪৯ হাজার কর্মী গেছেন দেশটিতে। বাজার পুরোপুরি চালু হলে বছরে ৫০ হাজারের বেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হতে পারে সেখানে।


 


কুয়েতে বাংলাদেশিদের চিত্র


কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জান গেছে, দেশটিতে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার ৯১১ জন সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মরত, যা শ্রমবাজারের ১৩ শতাংশ।


প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুয়েতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থান চতুর্থ। এই শ্রমবাজারের একটি বড় অংশ ভারত ও মিসরীয় প্রবাসীদের দখলে। এ দুই দেশ থেকে আট লাখের বেশি কর্মী কুয়েতে অবস্থান করছেন।


প্রবাসীরা মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে বেশি করে দক্ষ জনশক্তি এসে কুয়েতিদের সঙ্গে কাজ করলে, বাংলাদেশের ভালো দিকগুলো তুলে ধরলে কুয়েতে দেশের সুনাম বৃদ্ধিসহ শ্রমবাজারেও প্রভাব বিস্তার করা যাবে।


দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতে বসবাস করছেন মুন্না হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশি কর্মীদেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কুয়েতে। কিন্তু চাহিদামতো দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না। কুয়েতে বর্তমানে অনেক প্রবাসী আছেন, যাঁরা একসময় অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে এসে আজ নিজ মেধায় প্রতিষ্ঠিত।’


বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হলে সৌদির পাশাপাশি কুয়েতে কর্মী যাবে বলে জানান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য একটা বড় শ্রমবাজার ছিল কুয়েত। যদি বিধি-নিষেধ তুলে নেয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমরা সৌদি আরবের পাশাপাশি কুয়েতের শ্রমবাজারে ভালো কর্মী পাঠাতে পারব। কুয়েতে কর্মীদের চাহিদা, বেতনাদি ও সুযোগ-সুবিধা ভালো। তাঁরা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা পান। আমরা এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ কর্মী পাঠাতে পারব। পাশাপাশি সেখান থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোও বাড়বে।’


শেয়ার করুন