পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ্যা গল্প’ বানানোর নেপথ্যে থাকা ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে সরকারকে কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
পাঁচ বছর আগে জারি করা রুলের শুনানির পর মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালত আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই কমিশন গঠন করতে বলেছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে সোমবার এ রুলের শুনানির সময় আদালত ‘ষড়যন্ত্র না থাকলে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ কেন হল’, এমন প্রশ্নও করেছিল।
সেদিন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা আমাদের অহংকার। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা থাকেন, তারা জাতির শত্রু, দেশের শত্রু, তাদের চিহ্নিত করা দরকার। ষড়যন্ত্রকারীরা দেশবিরোধী, এদের খুঁজে বের করতে হবে।”
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ্যা গল্প’ সংক্রান্ত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিল বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ।
ওই রুলে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে ১৯৫৬ সালের ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট’র তৃতীয় অনুচ্ছেদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন অনুযায়ী কমিটি বা কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
এছাড়া কমিটি বা কমিশন গঠনে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
পরে ওই কমিশন গঠন নিয়ে সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালির পর এই বিষয়ে গত পাঁচ বছরে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে রুল জারি করা হাই কোর্টের ওই বেঞ্চের পরিবর্তন হওয়ার পর এই সময়ে মামলাটি আর কোনো বেঞ্চে উঠেনি।
পাঁচ বছর আগে স্বতঃপ্রণোদিত যেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই রুল আদালত দিয়েছিল, তার মধ্যে একটির শিরোনাম ছিল-‘ইউনূসের বিচার দাবি’। পদ্মায় বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল বলে সব সময় বলে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তবে ইউনূস সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
ওই রুল জারির পাঁচ বছর পর গত শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এরপর এ সংক্রান্ত রুল শুনানি চেয়ে হাই কোর্টে গত রোববার বিষয়টি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমিন উদ্দিন মানিক। পরে সোমবার ও মঙ্গলবার রুলের বিষয়ে শুনানি নিয়ে কমিশন গঠনের আদেশ দিল হাই কোর্ট।