বাংলাদেশে হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশের হিন্দুদের একাংশের দেশত্যাগ করার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ওই হিন্দুদের যাতে ভারতে ধর্মীয় শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব পেতে সমস্যা না হয়, তার জন্য কেন্দ্র সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এনেছে বলে ফের দিল্লিতে দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দুর বক্তব্য, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর মনে হচ্ছে, ফের হিন্দুদের বড় অংশের বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসার পরিস্থিতি তৈরি হলেও হতে পারে। তবে বিজেপির একাংশের বক্তব্য, সিএএ-র মাধ্যমে হিন্দুরা নাগরিকত্ব পেলেও, পশ্চিমবঙ্গে ‘বেনোজল’ চিহ্নিত করতে অবিলম্বে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) কার্যকর করার প্রয়োজন রয়েছে। অন্য দিকে তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা, বাংলাদেশের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফের সিএএ-এনআরসি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে মাঠে নামবে গেরুয়া শিবির।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও মন্তব্যে যাতে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে না যায়, তার জন্য বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে বারণ করে দিয়েছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ। প্রসঙ্গত, গতকালই শুভেন্দু মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এক কোটি হিন্দু শরণার্থী বাংলায় চলে আসতে পারেন। ওই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মধ্যে আজ তড়িঘড়ি দিল্লি এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু। যদিও তিনি দাবি করেন, তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়নি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে তিনি শাহের সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছিলেন। তাঁকে আজ বিকেল ৩টেয় সময় দেন শাহ।
আজ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গেও দেখা করেন শুভেন্দু। নড্ডার সঙ্গে তাঁর সাংগঠনিক বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। আর শাহের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর আক্রমণ হওয়ায় উদ্বেগ নিয়ে এসেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমায় আশ্বস্ত করে বলেছেন, আর যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য কেন্দ্র তৎপর।’’
আজ সকালে সংসদে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সূত্রের মতে, বৈঠকের পরে তৃণমূল নেতৃত্ব আলাদা করে জয়শঙ্করকে নিশ্চিত করতে বলেন যে, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা যেন এমন কোনও প্ররোচনামূলক মন্তব্য না করেন যাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুভেন্দুর মন্তব্য পরিবেশ বিষিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ জানায় তৃণমূল। সিএএ নিয়ে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমার মাকে তাঁর বাবার হাত ধরে ১০ বিঘা জমি ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসতে হয়। যা বলেছি, তা ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এ ধরনের ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার শরণার্থীদের জন্য সিএএ তৈরি করা হয়েছে। আমি কাউকে ভারতে আহ্বান করিনি। বলেছি, মানসিক প্রস্তুতি রাখুন।’’ বিজেপির আর এক নেতার দাবি, নাগরিকত্ব দেওয়া যতটা দরকার, তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন যে সমস্ত বাংলাদেশি মুসলিম পরিচয় গোপন করে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের এনআরসি-র মাধ্যমে চিহ্নিত করা। যাতে জনবিন্যাসের যে ‘পরিবর্তন’ হয়েছে, তা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।