গত ১৫ বছরে গ্রাহক পর্যায়ে অন্তত ১৭ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় সরকারের ভর্তুকি রয়েই গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭টি কিস্তির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ১২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন-জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির নামে (আংশিক) ২০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল থেকে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতির সমন্বয়ের কারণেই গ্রাহক পর্যায়ে এতবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার পরও এমন বিপুল পরিমাণ অর্থ এ খাতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আংশিক নগদে ভর্তুকি দেওয়া হয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ছয়টি কিস্তিতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১১টি কিস্তিতে ৭ হাজার ১৬৬ কেটি টাকা নগদ ভর্তুকি প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া পিডিবি বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা নগদ অর্থে পরিশোধ করতে না পারায় এসব কোম্পানিকে বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন-জুলাই পর্যন্ত ২০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৮১২ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ২ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা; ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আরও ১৪ হাজার ৩৩৬ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা বন্ড ইস্যু করা হয়েছে।
এ ছাড়া ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল থেকেও ভর্তুকি বাবদ ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ বছরে শতাধিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে প্রায় প্রতি বছরই বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও। এদিকে হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সেটিকে বরাবরই ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন’ বলে অভিহিত করে আসছিলেন।
তাদের ভাষ্য, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের ১ লাখ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কার্যত সরকারের ‘কাছের লোকদের’ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যদি পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হতো, তাহলে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর পরও ভর্তুকি দিতে হতো না।
বিষয়টি নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, আমরা সব সময়ই বলে আসছি বিগত সরকারের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ছিল ভুলনীতি ও দুর্নীতির সমন্বয়। অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন করা হয়েছে। দলীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের উচিত হবে বিগত সরকারে সময় নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক করে মানুষকে অতিরিক্ত মূল্য প্রদানের হাত থেকে রক্ষা করা।