১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:৩৯:০৮ অপরাহ্ন
আবারও বেসরকারি ব্যাংকে ছাঁটাই-আতঙ্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১১-২০২৪
আবারও বেসরকারি ব্যাংকে ছাঁটাই-আতঙ্ক

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ছাঁটাই–আতঙ্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন হওয়া ব্যাংকগুলোয় এই আতঙ্ক বেশি। অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগ করানো বা ছাঁটাই করা হচ্ছে।


ইতিমধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময়ে নিয়োগ দেওয়া ৫৭৯ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকও (ইউসিবি) শতাধিক কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ার তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকটির প্রায় ৪০ কর্মকর্তা ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।


এ ছাড়া ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, কমার্স, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকও এখন কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।


এদিকে গত বৃহস্পতিবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) থেকে এক দিনেই ৫৮০ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়; যাদের মধ্যে ডিএমডি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদের কর্মী রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাদের নিয়োগ বাতিল করে প্রত্যেককে পৃথক চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটি; ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ব্যাংকটির পর্ষদ এস আলমমুক্ত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে এসব ব্যক্তিকে পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন ব্যাংকটির পর্ষদ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। 


ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) শীর্ষ পর্যায়ের ৪০ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য গত সপ্তাহে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেই বিভিন্ন শাখার ব্যবস্থাপক; অন্যরা প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে আছেন। ইতিমধ্যে তারা পদত্যাগ করেছেন। ব্যাংকটি সব মিলিয়ে ১০০ কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ার তালিকাভুক্ত করেছে। এই ঘটনায় ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ছাঁটাই-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।


আবার ইউসিবি ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ। জানা গেছে, এসব নিরীক্ষার কয়েকটি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এর ভিত্তিতেই অনেককে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে চাকরিচ্যুত করা হবে। তখন সুযোগ-সুবিধা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।


এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এক প্রজ্ঞাপনে নির্দেশনা দেয়, লক্ষ্য অর্জন না করার অজুহাত তুলে ব্যাংকারদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শুধু নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে ব্যাংক-কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।


এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের ইচ্ছেমতো চাকরিচ্যুত করা যাবে না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, তা এখনো বহাল আছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাচের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে বেছে বেছে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।


শেয়ার করুন