প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি হোটেলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন।
সে নৈশভোজে মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাশাপাশি বসেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে বলেন, “ব্যাংককে আজ বিমসটেক সম্মেলনের নৈশভোজে দুই নেতার সাক্ষাৎ হয় এবং তারা কুশলাদি বিনিময় করেন।
“নৈশভোজে উভয় নেতাকে বেশ কিছু সময় ধরে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলতে দেখা গেছে।”
বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের ‘যথেষ্ট সম্ভাবনার’ কথা বলেছেন হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান।
বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা নৈশভোজে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে ছবি তোলেন।
এদিন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক জোট বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ব্যাংককে পৌঁছান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। শীর্ষ সম্মেলন হবে শুক্রবার।
প্রতিবেশী দুদেশের সম্পর্কের ‘স্থবিরতার’ মধ্যে এ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দিয়ে দিল্লিতে চিঠি পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে ওই চিঠির জবাব না পাওয়ার মধ্যে মোদীর প্রকাশিত সফরসূচিতে ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কোনো বিষয় ছিল না।
বুধবার রাজধানী ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর বলেন, “আমরা এই বৈঠকটার জন্য অনুরোধ করেছি সরকারিভাবে। আমাদের আশা করার সঙ্গত কারণ আছে। এই বৈঠক হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।”
ওই চিঠির প্রতিউত্তরের জন্য অপেক্ষায় থাকার কথা তুলে ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে, বৈঠকটি হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘স্থরিবতা’ কাটার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
“এবং আমরা আশা করি যে, যদি এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে স্থবিরতা, সেটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনই তিনি ভারতে চলে যান। তিন দিন পর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
এরপর থেকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর দুই দফায় দেখা হওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও তা হয়ে ওঠেনি। বিমসটেকের সম্মেলনে তাদের বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল।
বুধবার ব্যাংককে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনও ইউনূস-মোদী বৈঠক নিয়ে প্রায় একই রকমের বক্তব্য দেন।
বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা এই বৈঠকের জন্যে ভারতীয় পক্ষকে অ্যাপ্রোচ করেছি এবং আমরা একটা ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় আছি।”
ভারতীয় এক সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের দিক থেকে একটা অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই আশা করি, বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।”
বৃহস্পতিবার ব্যাংককে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন চুক্তি সই হয়।
সেদিন বিমসটেক ইয়াং জেনারেশন ফোরাম এ মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাইল্যান্ডের দুই মন্ত্রীর সাক্ষাৎ
বাসস লিখেছে, বিমসটেক ইয়াং জেনারেশন ফোরাম এ বক্তব্য দেওয়ার পর থাইল্যান্ডের সামাজিক উন্নয়ন ও মানব নিরাপত্তা মন্ত্রী বরাভুত সিল্পা-আর্চা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংযুক্ত মন্ত্রী জিরাপর্ণ সিন্ধুপ্রাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সম্মেলনে অংশ নিতে মুহাম্মদ ইউনূস ৪ এপ্রিল পর্যন্ত থাইল্যান্ডে অবস্থান করবেন। বিমসটেকভুক্ত বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও তিনি অংশ নেবেন।