চলতি আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ধারাবাহিকতার অভাবে পড়ে গেছে বাজেভাবে। টুর্নামেন্টের শুরুতে জয়ের ছন্দে থাকলেও এখন টানা দুই ম্যাচে হেরেছে তারা। মোট আট ম্যাচে পাঁচটি হার নিয়ে এখন প্লে-অফে ওঠার সম্ভাবনা বেশ কঠিন জায়গায় দাঁড়িয়েছে। পাঁচবারের ফাইনালিস্ট এবং দুইবারের চ্যাম্পিয়ন এই দলটির এমন পারফরম্যান্স ভক্তদের হতাশ করেছে।
প্রথমত, অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানের কৌশলগত দুর্বলতা স্পষ্ট। তিনি প্রতিটি হারের পরই বলছেন, ‘শেখা উচিত, সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ কিন্তু সেই শেখার ফলাফল মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বারবার একই ভুল করছেন—বোলিং পরিবর্তনে দেরি, সঠিক সময়ে ফিল্ডিং সাজানো না হওয়া কিংবা ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষের হাতে সহজেই ম্যাচ চলে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, ওপেনিং জুটির ব্যর্থতা কেকেআরের জন্য বড় ধাক্কা। গতবার ফিল সল্ট ও সুনীল নারাইন দারুণ সূচনা এনে দিতেন। এবার সল্ট না থাকায় কুইন্টন ডি’কক বা রহমানুল্লাহ গুরবাজ সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারছেন না। নারাইনও কয়েকটা ম্যাচে শুরু ভালো করলেও আগের মতো মারকুটে ফর্মে নেই।
তৃতীয়ত, মিডল অর্ডারের ভরসাহীনতা স্পষ্ট। শ্রেয়স আইয়ার নেই, বেঙ্কটেশ আয়ারের ব্যাট থেকে রান আসছে না। ব্যাটিংয়ের এই স্তরে কেউ দাঁড়িয়ে দলকে টানতে পারছেন না। ফলে মাঝের ওভারে রান তোলায় গতি আসছে না, যা ম্যাচের রানে প্রভাব ফেলছে।
চতুর্থত, ফিনিশারদের ব্যর্থতা কেকেআরের হারের আরেকটি বড় কারণ। রিঙ্কু সিং, আন্দ্রে রাসেল বা রমনদীপ সিং কেউই ধারাবাহিকভাবে রান করতে পারছেন না। এই বিভাগে কোনো ম্যাচে উল্লেখযোগ্য স্কোর না পাওয়ার কারণে শেষদিকে চাপে পড়ে যাচ্ছে পুরো দল।
বিদেশি পেসারদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মিচেল স্টার্ক চড়া দামে আসলেও তার পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা নেই। স্পেনসার জনসন এখনো প্রমাণ করতে পারেননি নিজেকে, আর নোখিয়াকে পর্যাপ্ত সুযোগই দেওয়া হয়নি। এই কারণে হর্ষিত রানা ও বৈভব অরোরার মতো তরুণদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে, যা তারা সামলাতে পারছেন না।
শেষত, বরুণ চক্রবর্তীর ফর্মে ওঠানামা সমস্যাটা আরও বাড়িয়েছে। আগের বছর উইকেট নেওয়ায় দলের মাঝের ওভারে জোর ছিল। এবার তিনি কখনও উইকেট পাচ্ছেন, কখনও খরুচে হয়ে উঠছেন।
সব মিলিয়ে কেকেআরের পরিস্থিতি এখন বেশ জটিল। দলে রয়েছে প্রতিভা, কিন্তু পরিকল্পনার ঘাটতি, অধিনায়কের সিদ্ধান্তহীনতা আর খেলোয়াড়দের অনিশ্চিত পারফরম্যান্স প্লে-অফ স্বপ্নকে কঠিনই করে তুলেছে।