মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) আলমগীর কবীরের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আটকে রাখা ৯১টি ফাইল পেয়েছে দুদক। তাঁর টেবিলে আটকে রাখা এই ফাইলগুলো বিভাগের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন। আগামী ৬ মে পর্যন্ত ফাইলগুলো পরিচালকের ছাড়ার সময় রয়েছে। টাকা ছাড়া ফাইল ছাড়েন না ডিডি, এ অভিযোগে দুদকের একটি দল আজ বুধবার তাঁর দপ্তরে অভিযান চালায়।
এর আগে আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ একবার অভিযান চালিয়েছিল দুদক। তখন ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুদক। এ ব্যাপারে দুদক সদর দপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এ ছাড়া ২৮ মার্চ মাউশি রাজশাহীর পরিচালক ফাইল আটকে রাখাসহ সাত অভিযোগ এনে ডিডি আলমগীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। আলমগীর এর সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
মাউশি রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম যোগদান করেন আলমগীর কবীর। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে এমপিও দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের তদন্ত চলাকালে তাঁকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছিল। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সবেতনে তিনি পরিচালক হওয়ার জন্য তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। কিন্তু পরিচালক হতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ নভেম্বর তাঁকে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিডি হিসেবে পদায়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
এ নিয়ে ১৯ নভেম্বর ‘দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই হলেন মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
দুদকের আজকের অভিযানে আটকে রাখা ফাইলগুলোর বিষয়ে মাউশি সূত্রে জানা গেছে, আলমগীর জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনোয়ার হোসেনকে কিছু কাগজপত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কিন্তু অনলাইনে আবেদনপত্র দাখিল করার পর আর কোনো কাগজপত্র দেখানোর সুযোগ থাকে না। আজ বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অধ্যক্ষ মো. মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ একটি কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এসেছিলেন। একই সঙ্গে উপপরিচালকের সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তিনি বোর্ডে এসেছেন, আর ডিডি নিজেই তাঁর কলেজে গেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। অধ্যক্ষ জানান, তাঁর কলেজের ২৭ শিক্ষকের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়েছে।
পবা উপজেলার এম আর কে কলেজের অধ্যক্ষ হায়দার আলীকেও কিছু কাগজপত্র নিয়ে ডেকেছিলেন উপপরিচালক। তাঁর কলেজের ৪১ শিক্ষকের বেতনের আবেদন করা হয়েছে। আজ দুদকের অভিযানের পর হায়দার আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও স্বীকার করেন যে উপপরিচালক কিছু কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি ফোনে বলেছেন, সব কাগজপত্র পরিচালকের কাছে দেওয়া রয়েছে। নিজে দেখা করতে আসেননি।
গতকাল মঙ্গলবার হটলাইনে দুদকে অভিযোগ করা হয়, দাবি করা উৎকোচ না দেওয়ার কারণে মাউশির রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ে তাঁদের ফাইল আটকে রাখা হয়েছে। এই অভিযোগ পাওয়ায় আজ দুদক মাউশিতে উপপরিচালকের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় দুদক কর্মকর্তা উপপরিচালকের কম্পিউটারে ৯১টি আটকে রাখা ফাইল পেয়েছেন, যে ফাইলগুলো সহকারী পরিচালক যথাসময়ে তাঁর কাছে পাঠিয়েছেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, ফাইলগুলো তিনি প্রথমে সহকারী পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি যথাসময়ে ফাইলগুলো দেখে ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু উপপরিচালক নতুন এমপিওভুক্তির ৯১টি ফাইল ছাড়েননি। তাঁকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ করে ফাইলগুলো ছেড়ে দিতে বলেছেন। ৬ মে ফাইলগুলো তাঁর কাছ থেকে পাঠানোর শেষ সময়।
একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, তিনি ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল অনুমোদন করেন না, এ রকম অভিযোগ এর আগেও পেয়েছেন। সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে তার প্রমাণ পেয়েছেন। প্রতিবেদন যথারীতি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আবার তাঁরা একই ধরনের অভিযোগ পান। আজ অভিযান চলাকালে তাঁকে তাঁর কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর কম্পিউটারে আটকে রাখা ৯১টি ফাইল তাঁরা পেয়েছেন। তাঁরা ফাইলগুলোর প্রিন্ট নিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা আগামী রোববার কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাবেন।