গাজায় সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলো বুধবার একদিনের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগেই সতর্ক করে দিয়েছে, এই কেন্দ্রগুলোর দিকে যাওয়া রাস্তা ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত মানবিক সহায়তা নেটওয়ার্ক গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানিয়েছে, তাদের কেন্দ্রগুলো ‘হালনাগাদ, সংগঠন এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির কাজের জন্য’ একদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। ফাউন্ডেশনটি মাত্র গত সপ্তাহে কার্যক্রম শুরু করেছে,
অন্যদিকে, ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, কেউ যেন বিতরণ কেন্দ্রে প্রবেশ না করে কিংবা সেগুলোর দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলো ব্যবহার না করে, অর্থৎ ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়েছে।
এদিকে হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালেই এক বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এটি ছিল গত তিন দিনের মধ্যে তৃতীয় প্রাণঘাতী ঘটনা, যা জিএইচএফ-এর একটি বিতরণ কেন্দ্রের রাস্তায় ঘটল। আইএফডি বলেছে, তাদের সেনারা গুলি চালায় যখন তারা ‘নির্ধারিত রুট থেকে সরে আসা’ কিছু সন্দেহভাজনকে এগিয়ে আসতে দেখে।
হাসপাতালের বর্ণনা, চরম অবস্থা
ঘটনার পর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের পরিচালক ডা. আতেফ আল-হাউত জানান, আহতরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আসে।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম রাফায় সহায়তা প্রত্যাশী বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি চালিয়েছে।’ সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ট্যাংক, কোয়াডকপ্টার ড্রোন ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়। সেখানে কর্মরত এক বিদেশি চিকিৎসক পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণ হত্যাযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আইএফডি দাবি করেছে, তারা ‘গাজাবাসীদের মানবিক সহায়তা কেন্দ্রগুলোর কাছে যেতে বাধা দিচ্ছে না।
’ জিএইচএফ জানিয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার আবার সহায়তা বিতরণ শুরু করবে।
তারা আরো জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সহায়তায় সামরিক এলাকাগুলোর পাশে পথচলাচলের দিকনির্দেশনা চেয়েছে, যাতে বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ এড়ানো যায়।
সংস্থাটি জানায়, তারা নাগরিকদের জন্য পরিষ্কার নির্দেশনা তৈরি এবং নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ বাড়ানোর কাজ করছে। জিএইচএফ-এর এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো সহায়তা নিতে আসা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘের ক্ষোভ, স্বাধীন তদন্তের দাবি
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঘটনার ‘তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন’ তদন্ত দাবি করেছেন।
তার মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বলেন, জিএইচএফকে ঘিরে পরিষ্কার ধারণার অভাব ও জবাবদিহিতার অভাব স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোর চারপাশে অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের দেখা যাচ্ছে। কেউ জানে না তারা কারা, তারা কাকে জবাবদিহি করে।’
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ১১ সপ্তাহব্যাপী ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার ফলে গাজায় দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে আছে। জিএইচএফ গাজায় জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে কাজ শুরু করেছে। ইসরায়েল জাতিসংঘের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তারা সহায়তা হামাসের হাতে পড়া ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে — যদিও জাতিসংঘ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নতুন পদ্ধতিতে, গাজাবাসীদের ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় থাকা অল্প কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে সহায়তা সংগ্রহ করতে হচ্ছে, যা পরিচালনা করছে সশস্ত্র মার্কিন কন্ট্রাক্টররা।
সমালোচকরা বলছেন, এতে মানুষকে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হচ্ছে এবং প্রায় ২০ কেজি ওজনের প্যাকেট নিজেরাই বহন করে আনতে হচ্ছে। দুজারিক বলেন, জিএইচএফ হলো মানবিক সহায়তা দেওয়ার ‘ভুল উপায়ের উদাহরণ’, যা মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে।
তিনি বলেন, ‘এই কৌশলটি অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি-এর বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, ‘সহায়তা বিতরণ এখন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে।’ জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা জিএইচএফ-এর বিরুদ্ধে মানবিক নীতিমালা না মানার অভিযোগ করেছে।
এদিকে মঙ্গলবারই ঘোষণা আসে, ক্রিশ্চিয়ান ইভানজেলিক যাজক এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থক রেভারেন্ড ড. জনি মুর হবেন জিএইচএফ-এর নতুন প্রধান। তিনি জিএইচএফ-এর প্রথম প্রধান জ্যাক উডকে বদলি করছেন, যিনি একজন সাবেক মার্কিন মেরিন এবং যিনি সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন।